পরমাণুর জনক মহর্ষি কণাদ I জেনে নিন বিবৃতি I

কণাদ,karnad
ভারতীয় দার্শনিক কণাদ খ্রীস্টের জন্মের ৬০০ বছর আগে পরমাণুর ধারণা দেন। তিনি বলেন সকল পদার্থই ক্ষুদ্র এবং অবিভাজ্য কণিকা দ্বারা তৈরী। পরমাণু তত্ত্ব গ্রিক দার্শনিকেরা পরীক্ষা ও পর্যবেক্ষণ ব্যবহার করে নয়, বরং দার্শনিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে পদার্থের তত্ত্ব নির্মাণের চেষ্টা করেন।

মহর্ষি কণাদ ‘কণভূক’, ‘কণভক্ষ’, ‘যোগী’, ‘উলূক’, ‘কাশ্যপ’ প্রভৃতি নামে পরিচিত ছিলেন। প্রবাদ আছে যে, তিনি দিবাভাগে গহন অরন্যে গভীর ধ্যানে মগ্ন থাকতেন এবং রাত্রিকালে সবাই যখন নিদ্রিত থাকতো তখন তিনি আহারান্বেষণে বের হতেন। এরকম বৃত্তি উলূক বা পেচকের বৃত্তি তুল্য বলে তাঁর উলূক নামকরণ করা হয়েছে। মহাভারতের শান্তিপর্ব-১১-এ এরকম কাহিনীর ছায়া রয়েছে- ‘উলূকঃ পরমো বিপ্রো মার্কণ্ডেয় মহামুনিঃ’।
অন্য এক প্রবাদে বলা হয়েছে কণাদ কঠোর যোগাভ্যাসের ফলে শিবের অনুগ্রহ লাভ করেন। শিব কণাদের তপশ্চর্যায় সন্তুষ্ট হয়ে উলূকের রূপ ধরে তাঁর সম্মুখে আবির্ভূত হন এবং ষটপদার্থের উপদেশ দান করেন। বায়ুপুরাণেও উল্লেখ আছে যে, কণাদ পরম শৈব ছিলেন। 

‘কণাদ’ নাম প্রসঙ্গে ন্যায়-কন্দলীতে উল্লেখ আছে, ক্ষেত্রে পড়ে থাকা শস্যকণা ভক্ষণ করে অর্থাৎ একপ্রকার ভিক্ষাবৃত্তির দ্বারা জীবিকা নির্বাহ করতেন বলে তাঁকে কণাদ বলা হতো। এবং এ কারণেই তাঁকে কণভূক বা কণভক্ষ বলা হতো। আবার কণাদ কাশ্যপ গোত্রীয় ছিলেন বলে তাঁর দর্শনকে কাশ্যপীয় দর্শনও বলা হয়। মোটকথা বৈশেষিক সূত্রকারের বিবিধ নাম অবলম্বনেই এই সম্প্রদায় বিভিন্ন নামে পরিচিতি লাভ করে। তবে সাধারণভাবে এই দর্শন ‘বৈশেষিক দর্শন’ নামেই পরিচিত।

হিন্দু পৌরাণিক ইতিহাস মতে ইনি ছিলেন পদার্থবিজ্ঞানী। জীবনের কঠোরতাকেই ঋষিদের আধ্যাত্মিক উন্নতির মূলসূত্র হিসাবে বিবেচনা করেছেন। ইনি 'বিশেষ' নামক একটি সুক্ষ্ম পদার্থ স্বীকার করে নিয়েছিলেন। তাঁর মতে- পদার্থ মূলত ১০ প্রকার। এর মধ্যে ছয়টি ভাব পদার্থ বাকি চারটি অভাব পদার্থ। ছয়টি পদার্থ হল- দ্রব্য, গুণ, কর্ম, সামান্য, বিশেষ ও সমব্যয়। অপর চারটি অভাব পদার্থ হল- প্রাগভাব, ধ্বংসাভাব, অন্যোন্যভাব ও অত্যন্ত্যভাব। ইনি প্রথম পরমাণু সম্পর্কে বক্তব্য প্রদান করেছিলেন। তাঁর মতে- একমাত্র পরমাণুই সত্স্বরূপ নিত্যপদার্থ এবং সমস্ত জড় পদার্থই পরমাণুর সংযোগে উৎপন্ন হয়েছে। বিশেষ বিশেষ প্রকার পরমাণুতে বিশেষ নামে পদার্থ আছে। তারই শক্তিতে ভিন্ন ভিন্ন রূপ পরমাণু ভিন্ন হিসাবে চিহ্নিত হয়। ইনি প্রথম তেজ ও আলোকে একই বস্তুর বিভিন্ন অবস্থা হিসাবে চিহ্নিত করেন।

ভারতীয় আস্তিক ষড়দর্শনের মধ্যে অন্যতম দর্শন হলো বৈশেষিক দর্শন। এই দর্শনের ‘পদার্থতত্ত্ব’ বা ‘বিশ্বতত্ত্বে’র জ্ঞান প্রাচীনকালে যে কোন ছাত্রের জন্য অপরিহার্য বলে মনে করা হতো। বিশ্বতত্ত্বের আলোচনাই বৈশেষিক দর্শনের প্রধান আলোচনা। ন্যায়-সম্প্রদায়ের মতো বৈশেষিক সম্প্রদায়ও মোক্ষকেই পরমপুরুষার্থ বলে মনে করেন। ন্যায় দর্শনে যেমন ষোড়শ পদার্থের তত্ত্বজ্ঞানকে মোক্ষের হেতুরূপে গণ্য করা হতো, বৈশেষিক দর্শনে তেমনি দ্রব্যাদি সপ্তপদার্থের সাধর্ম্য বা বৈধর্ম্যহেতুক তত্ত্বজ্ঞানকেই মোক্ষের হেতুরূপে গণ্য করা হয়। By : 
জীবন ওম জ্যোতি
Post a Comment (0)
Previous Post Next Post
close