মহামুনি কপিল্য আত্মাতত্ত্ব। যার থেকে আধুনিক সৃষ্টিতত্ত্বের সূচনা।

মহামুনি কপিল্য আত্মাতত্ত্ব। যার থেকে আধুনিক সৃষ্টিতত্ত্বের সূচনা।
প্রতীকি ছবি
সাংখ্য দর্শনের প্রনেতা কপিল মুনি (সাগরদ্বীপের কপিল মুনি)। তার দর্শনে সৃষ্টি কর্তা এক ঈশ্বর কে বিশ্বাস করেন নি। তার মতে, এই সৃষ্টির আদিতে এবং তার মাঝে আছেন এক ‘বিশ্ব শক্তি’, যার নাম তিনি দিলেন ‘অক্ষর ব্রহ্ম’।
এই অক্ষর ব্রহ্ম কেই সনাতনি ভাষায় বলা হয় “ঈশ্বর” এবং আরো অন্য অনেক নামে ডাকা হয়। সৃষ্টির আদিতে তিনি ছিলেন এক ‘ঘনীভুত শক্তির আধার’, তার পরিমাপ ছিলো বিন্দু বৎ। চারিদিক অন্ধকারে লুপ্ত হয়ে ছিলো। সৃষ্টির উন্মাদনায় সেই মহাশক্তি তার নিজ অংশ দিয়েই সৃষ্টি করলেন তার শক্তির আধার, নাম ‘মহামায়া’(প্রকৃতি)। তিনিই নারী শক্তি; ‘ক্ষর পুরুষ’।
সৃষ্টি হলো মায়া রুপী ‘পঞ্চ বিংশতি’ (পচিশ টি)‘কারন’, সৃষ্টির মুলীভুত কারন (পদার্থ) সেগুলি। সেই পঞ্চ বিংশতি কারন মহামায়ার (প্রকৃতি) প্রভাবে সৃষ্টি যজ্ঞ শুরু হলো। সৃষ্টি হলো এই মহাবিশ্ব,যার একটি ক্ষুদ্র অংশ আমাদের এই গ্রহ,পৃথিবী, আর তার মধ্যে অতি নগন্য একটি জীব ‘মানুষ’। 
অক্ষর পুরুষ চৈতন্য ময়,অর্থ্যাত তার চিৎ শক্তি (Conciousness) আছে। অক্ষর পুরুষের সেই চিৎ শক্তি অতি ক্ষুদ্রাতি ক্ষুদ্র ভাবে ছড়িয়ে আছে এই সৃষ্টির প্রতিটি বস্তুর মধ্যে, সে মানুষ হোক বা উদ্ভিদ হোক এমন কি আপাত জড় (inert) সব বস্তুর মধ্যেই এই চিৎ শক্তি আছে। ( এমন কি কোয়ান্টাম ফিসিক্স এই তত্ব মানে, বিজ্ঞানী হকিন্স, বিজ্ঞানী মনি ভৌমিক সবাই আজ এই সত্য মেনে নিয়েছেন)। শ্রী কৃষ্ণ গীতার ‘বিভুতি যোগে’ সেই একই কথা বলেছেন সরাসরি। 
কপিল মুনি সৃষ্টির আদি শক্তিকে সম্মান জানিয়ে “আত্মা” নামে তার বিভুতি শক্তিকে নাম দিয়েছেন। এবং বিশেষ বিস্তৃত ভাবে সেই আত্মার স্বরুপ বর্ননা দিয়েছেন। যেহেতু সৃষ্টির সব কিছুতেই সেই বিশ্ব শক্তি বা বিশ্ব চৈতন্যের উপস্থিতি আছে এবং তার নাম ‘আত্মা’ তাই তার উৎপত্তির আধারের নাম ‘পরমাত্মা’। তাকে যে নামেই ডাকুন, কপিল মুনি বা আমাদের কিছু যায় আসে না। তার নামে গালি পাড়লেও কিছু হয় না।
তিনি সেই তিনিই থাকেন। সেই আত্মা ‘সর্ব ভুতানাম’ ই থাকেন। জড় বস্তুতে কিসের চৈতন্য? ইলেক্ট্রন প্রোটন কি চৈতন্য হীন?? পদার্থ বিজ্ঞানীরা কি বলেন? তাহলে সেই পরমানু বা এটমের মধ্যে এতো শক্তি কি করে লুকিয়ে থাকে? বিজ্ঞানীরা হয়তো বলবেন ‘এমনি এমনি ই থাকে”। আর ঐ চৈতন্য ময় সত্তার মধ্যে “কোয়ার্টজ” নামে বস্তুটা কি ,যারা কারো কথা শোনে না ,নিজের মতোই চলে?আমরা বলি ওটাই সেই পদার্থের ‘আত্ম শক্তি’ বা তার মধ্যকার ‘আত্মার শক্তি’। কি করে এই শক্তি শেষ হবে বা কি করে তার জন্ম হবে। সেই শক্তি তো জন্মেই আছে সেই সৃষ্টির আদি থেকে, আর তাকে কে হনন করবে? ‘ন হন্যতে’ সেই শক্তি।
হিন্দুরা না জেনে সেই শক্তির পুজো করে, বিজ্ঞানীরা প্রতি নিয়ত গালা গাল দেন কিন্তু সেই শক্তির ই সাধনা করে আসছেন, তা না হলে গবেষনা গারে বসে কার স্বরুপ জানার চেষ্টা করছেন?
আমরা জেনেছি, আমাদের শরীরের সব বৈশিষ্ট্য বজায় থাকে বা আমাদের বংশানুক্রমিক সুস্থতা বা অসুস্থতা নির্ভর করে ওই জিনের মিউটেশনের ওপরে। তাহলে সেই যে পরিবর্তিত জিন তা কি করে আত্মা হলো যে আমরা জন্ম জন্মান্তরের আত্মা হয়ে গেলাম ? জিনের তো পরিবর্তন হয়, আত্মার তো পরিবর্তন হয় না। অর্থ্যাত জিন এবং আত্মা এক নয়। জিন কিছু জৈবিক গুনাবলীর সমাহার ,আর জৈবিক পদার্থ কখনো বিশ্ব চৈতন্যের অংশ হতে পারে না। সেই হিসাবে চৈতন্যময় আত্মা আর জৈব গুন সম্পন্ন জিন সম্পুর্ন ভিন্ন। জৈব পদার্থের বিকার আছে। তাই অনিত্য এবং পরিবর্তনশীল।
জিনের এই পরিবর্তন (মিউটেশান) হয় এবং যখন হয় তখন ই রোগ হয়। সেই রোগকেই বংশ গতি জনক রোগ বলা হয়। এ ছাড়া বংশগত না হলেও জিনের মিউটেশান হঠাৎ করে যদি হয় ,যদিও সেই ঘটনা সব সময় হয় না, তাহলেও কিছুকিছু রোগ হতে পারে। সেই ভাবে ক্যান্সার কিছু কিছু ক্ষেত্রে বংশানুক্রমিক এবং কিছু কিছু ক্ষেত্রে পারিপার্শিক কারনে খুব কম সময়ের মধ্যেই হতে পারে। জেনেটিক মিউটেশান একমাত্র পারিপার্শিক কারনেই ( Environmental factor) ঘটে কি অন্য কোনো কারনে ঘটে সেটা এখনো স্বতঃসিদ্ধ ভাবে প্রমানিত হবার অপেক্ষা রাখে। 
হারিকেনের আলো আলোই,অন্য কিছুই নয়। হারিকেনের চিমনীতে কিছু ময়লা লাগান,কি হবে? আসল আলো আর আসবে না। তাহলে কি হারিকেনের আলোর কোনো গুনগত পরিবর্তন হলো?? না। পরিবর্তন একটা হোলো, সেটা হলো একটি আলোর বিকৃতি। আত্মার আলো মানুষের চিত্ত আলোকিত করে রাখে। সেই চিত্তে যদি ময়লা লেপে দেওয়া হয় তাহলে আত্মার যে আলো সেখানে পৌছাবে সেই আলো বিকৃত আলো। জিন তাই আত্মা নয়। আত্মা জীবের চৈতন্য স্বত্তা। তার কোনো পরিবর্তন হয় না, যেটা হয় সেটা পারিপার্শিক কারনে আত্মার গ্লানি হয়।
সেই গ্লানি, কামনা ,বাসনা, ক্রোধ, হিংসা, লোভ,দ্বেষ, মোহ রুপী কালিমা যুক্ত (কশ্মল মিদং—গীতা ২য় অধ্যায়,২য় শ্লোক) আত্মা , আর শরীরে থাকতে চায় না। শরীরে না থাকতে চাওয়ার যে উদ্বেগ, সেটাই রোগ হিসাবে ফুটে বেরোয়। রোগ তাই আত্মার শড়ির ছেড়ে যাবার তোড়জোড়। তখন হয় জেনেটিক মিউটেশান, নানা রোগ এসে বাসা বাধে আমাদের শরীরে। এটাই হলো, বহু রকম শারীরীক রোগের মুল উৎস। একে জেনেটিক মিউটেশান বলূন বা অন্য কিছু বলুন, ফল সেই একই, দুঃখ,কষ্ট, অশান্তি ময় জীবন, এই পৃথিবিতে বাস করেই নরক বাস। 
জিন বা তার মিউটেশান কে তাই কখনো আত্মা বলে ভুল বুঝবেন না। জন্মান্তরে আত্মা সেই একই থাকে কিন্তু জিনের পরিবর্তন হতেই পারে। এক জন্ম থেকে আর এক জন্মে সেই একই আত্মা পিতা মাতার কাছে থেকে পাওয়া জিন যেমন পায়, যে পরিবেশে সে বড়ো হয় সেই পরিবেশ এবং তার শিক্ষা, নিজস্ব ভাবনা চিন্তা এবং কর্ম তার জিনের পরিবর্তন করতে পারে। আমি নিশ্চিত, জেনেটিক বিজ্ঞানীরা একদিন মুনি ঋষিদের এই আপ্ত্য বাক্যের সংগে সহমত হবেন, আর সেদিন এখন যেমন তারা “ঈশ্বর কনা’কে খুজে পেয়েছেন, তেমনি ঈশ্বরের সন্ধান ও পেয়ে যাবেন। 
“হরি ওম তৎ সৎ”
এইবেলাডটকম/এএস
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
নবীনতর পূর্বতন