কেমন কর্ম আমাদের ঈশ্বরের কাছে নিয়ে যাবে ? জানুন ও ঈশ্বরের পথে চলুন।

কেমন কর্ম আমাদের ঈশ্বরের কাছে নিয়ে যাবে ? জানুন ও ঈশ্বরের কাছে চলুন।

ভালো ধর্ম ভালো কর্ম সকল মানব জাতির একমাত্র পবিত্র বেদ ধর্মগ্রন্থে উহার স্থায়ী সমাধান দেয়।
যারা বেদোক্ত যজ্ঞাদি কর্মকে সকাম কর্ম বলিয়া অবহিত করেন বেদোক্ত কর্মকে, হেও প্রতিপন্ন করার চেষ্টায় ব্যাস্ত আছেন তাদের জন্য সকাম ও নিষ্কাম নিয়ে লিখেছি—
"জীবনের উদ্দেশ্য সকাম না নিষ্কাম কর্ম" আসুন এই উত্তরের সন্ধানে—
বেদে কর্ম কান্ডের মাধ্যমে উচছকুলে জম্ম, স্বর্গপ্রাপ্তি, নানা ক্ষমতা ঐশ্বর্য লাভের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু এই সবই ইন্দ্রিয় সুখ মাত্র। কেবল অল্প বুদ্ধি সম্পর্ন বিবেকহীন মানুষই বেদের এইসব পুষ্পিত বাক্যে প্রলুবদ্ হয়ে সকাম কর্মে আসক্ত হয়। তারা ইন্দ্রিয় সুখ ভোগ কেই জীবনের চরম উদ্দ্যেশ্যে মনে করে। তারা মনে করে যে, এর উদ্দে আর কিছু নেই। কেবল ঐশ্বর্য আর ভোগের প্রতি আসক্ত থাকায় তাদের বুদ্ধি সব সময় অস্থির, শত শত আশায় উত্তেজিত। তাদের চিত্ত কখনও ভগবানের সমাধিস্থ হয়না।
শ্রীমদ্ভগবদগীতায়_বলছেন
হে অর্জুন বেদের এই কর্ম কান্ডের জরা প্রকৃতির তিনটি গুনের দ্বারা (সত্ত্ব, রজ, ও তম) প্রভাবিত। তুমি সেই গুন গুলি অতিক্রম করে অপ্রাকৃত চেতনায় স্থিত হও।
কর্মে তোমার অধিকার আছে, কিন্তু কর্মফলে নেই। তাই ফল যাই হোক না কেনো, মানুষকে তার দায়িত্ব অনুসারে কর্ম করে যেতে হবে। (গীতা, ২/৪৭)
শ্রীমদ্ভগবদগীতা_অষ্টাদশ_অধ্যায়
কর্ম ৩ প্রকার যথাঃ—
১। সাত্ত্বিক কর্মঃ— যে নিয়ত (নির্দিষ্ট) কর্ম ফলাকাঙ্ক্ষাবর্জিত মানুষের দ্বারা রাগ (আসক্তি) — দ্বেষ ও কর্তৃত্বাভিমান রহিত হয়ে করা হয় তাকে বলে সাত্ত্বিক কর্ম। (গীতা ১৮/২৩)
২। রাজসিক কর্মঃ— যে কর্ম ভোগেচ্ছাযুক্ত মানুষের দ্বারা অহংকার অথবা পরিশ্রমপীর্বক শুরু করা হয় তাকে রাজসিক কর্ম বলে। (গীতা ১৮/২৪)
৩। তামসিক কর্মঃ— যে কর্ম পরিণাম, ক্ষতি, হিংসা ও নিজ সামর্থ্য না বুঝে মোহপূর্বক আরম্ভ করা হয় তাকে তামসিক কর্ম বলে। (গীতা ১৮/২৫)
(বৃহদারণ্যক_উপনিষদ্ ৪/৪/৫)
কর্ম ৩ প্রকার যথাঃ—
(১) প্রারদ্ধ কর্ম— পূর্বজন্মে কৃত হয়েছে যে কর্ম।
(২) সঞ্চিত কর্ম— জন্ম জন্মান্ত হতে সঞ্চিত যে কর্ম।
(৩) ক্রিয়ামান কর্ম— সঞ্চিত কর্মের ফলে ফল ভোগ হচ্ছে এমন কর্ম।

আদি ধর্মগ্রন্থ পবিত্র বেদে )

"অগ্নে নয় সুপথা রায়ে অস্মান্বিশ্বানি দেব বয়ুনানি বিদ্বান।
যুযোধ্যস্মাজ্জুহ রাণমেনো ভুয়িষ্ঠান্তে নম উক্তিবিধেম"।। 
(যর্জুবেদ, ৪০/১৬)
অনুবাদঃ— হে স্বপ্রকাশ জ্ঞানস্বরুপ, সর্বজগৎ প্রকাশক, সর্বসুখদাতা পরমেশ্বর! যে হেতু তুমি সম্পূর্ণ বিদ্যাযুক্ত কৃপা করিয়া আমাদিগকে বিজ্ঞান বা রাজ্যাদি ঐশ্বর্য প্রাপ্তির জন্য সুন্দর ও ধার্মিক আপ্ত পুরুষদের পথে সম্পূর্ণ প্রজ্ঞান ও উত্তম কর্ম প্রাপ্ত করাও এবং আমাদের নিকট হইতে কুটিল পাপরুপ কর্মকে দূর করিয়া দাও। এজন্য আমরা আপনার বহুবিধ স্তুতিরূপ বিনম্র প্রশংসা সর্বদাই করিতে থাকিব এবং সর্বদা আনন্দে থাকিব।
(যর্জুবেদ, ৪০/১৬) এর বিশ্লেষণ
হে দিব্য, জ্যেতির্ময়, দয়ালু ঈশ্বর আমরা তোমার প্রতি সর্ব্বোচ প্রাচুর্যময়, সশ্রদ্ধা প্রার্থনা নিবেদন করি।তুমি সর্বজ্ঞ। যে সকল পাপ আমাদের বিপথগামী করে তা দূর করে দাও। আমাদের সৎ পথে প্রাচুর্য সৌভাগ ও সকল প্রকার ঐশ্বযের প্রতি চালিত কর।

ঈশা বাস্য মিদং সর্ব্বং যৎ কিঞ্চিৎ জগতং জগৎ।
তেন ত্যক্তেন ভুঞ্জীথা মা গৃধঃ কস্য সিদ্ধনম্। 
(যর্জুবেদ, ৪০/১)


অনুবাদঃ— চলমান সৃষ্টির মধ্যে জড়-চেতন জগতে যা কিছু এই সব ঈশ্বর দ্বারা পরিব্যপ্ত। এইজন্য তাহা ত্যাগের দ্বারা ভোগ করো, কাহারো ধনে অভিলাষ করো না।
(যর্জুবেদ, ৪০/১) এর বিশ্লেষণ)
প্রকৃতি হইতে পৃথিবী পর্যন্ত সব পরিবর্তনশীল চর প্রাণী পরমাত্মা দ্বারা আচ্ছাদিত। সেই পরিত্যজ্য জগতে ভোগের অনুভব কর, কাহারো কোন পদার্থে লোভ করিও না।
(যর্জুবেদ, ৪০/১) এর বিশ্লেষণ)

সকল কিছু যাহা এই গতিশীল বিশ্বজগতে গতিশীল, তাহাতে ঈশ্বর পরিব্যাপ্ত। সুতরাং ইহাতেই জীবন যাপন কর যা তিনি দিয়েছেন, আসক্তি রহিত হয়ে ইহাকে বস্তুনিষ্ঠভাবে উপভোগ কর ৷ অন্যের ধনে লোভ কোরো না। (ঈশ্বর ব্যাতিত) এই ধন কারও নয়৷
এই সংসার মধ্যে বেদোক্ত নিষ্কাম কর্ম করে নিশ্চয়ই শত বর্ষ বাঁচতে ইচ্ছা করো। ইহা ভিন্ন অন্য প্রকার মার্গ হয় না, এই প্রকারে তুমি মনুষ্য মধ্যে কর্মে লিপ্ত হবে না।।
(যর্জুবেদ, ৪০/২)
(যর্জুবেদ, ৪০/২) এর বিশ্লেষণ)
কেবলমাত্র প্রত্যেকে তার দায়িত্ব সম্পাদন করে এখানে প্রত্যেকে শত বৎসর জীবিত থাকার ইচ্ছা করবে ৷ কেবলমাত্র এই উপায়ে (অন্য উপায়ে নয়) মনুষ্য আত্মা কর্মে লিপ্ত হয় না ৷
গভীরতম অন্ধকারে পতিত হয় যারা অবিদ্যার (মোহ, শুধু কর্ম) উপাসনা করে৷ আরও গভীর ও অন্ধকারে তারা পতিত হয় যারা বিদ্যায় (কর্মের সম্পর্কহীন জ্ঞান বা এর বাস্তব মূল বিষয়) গভীরভাবে রত।
(যর্জুবেদ, ৪০/১২)
শ্রীমদ্ভগবদগীতা বেদোক্ত যজ্ঞাদি কর্ম কি, সকাম নাকি নিষ্কাম কর্ম আসুন গীতার আলোকে বিস্তারিত দেখে নেয়া যাক!
যজ্ঞাদি কর্ম করা কার নির্দেশ?
ব্রহ্ম (ঈশ্বর) প্রথমে প্রজা সৃষ্টি করে বললেন—
"হে মনুষ্য তোমরা সর্বদা যজ্ঞ করিও। যজ্ঞ করিলেই ইষ্ট লাভ হবে। (গীতা ৩/১০)
যজ্ঞ কোথাহতে উৎপত্তি?
কর্ম বেদাশ্রীত ব্রহ্ম হতেই বেদের সৃষ্টি। সর্বব্যাপী ব্রহ্ম (ঈশ্বর) যজ্ঞে প্রতিষ্ঠিত থাকেন।
(গীতা, ৩/১৫)
যজ্ঞ ব্যতীত অন্য কর্ম করিলে কি হয়?
যজ্ঞার্থ ব্যতীত অন্য কর্ম করিলে এইলোকে কর্ম্ম বন্ধনে আবদ্ধ হইতে হয়। অতএব কৌন্তেয়! তুমি অনাসক্ত হইয়া যজ্ঞার্থ কর্ম্ম কর।
(গীতা, ৩/৯)
যে ব্যক্তি অগ্নি, হবি, (হোমের দ্রব্য সমূহ) এবং হোমযজ্ঞ কে ব্রহ্মভাবে মনে করেন তার সমস্ত কিছুই ব্রহ্মে লয় হয়। (গীতা ৪/২৪)
পবিত্র বেদে বহু যজ্ঞের বর্ণনা আছে। সেই সকল যজ্ঞ কর্মজনিত জেনে মুক্ত হওয়া যায়। (গীতা ৪/৩২)
যোগী পবিত্র বেদে, যজ্ঞে, তপস্যায় এবং দানে কখনও পূণ্যফল চান না। তাই তিনি অন্তিমে ঈশ্বর লাভ করে পরম গতি প্রাপ্ত হন।
(গীতা, ৮/২৮)
আসুন আমাদের আদি ধর্মগ্রন্থ পবিত্র বেদের সত্যের আলোকে জীবন গঠন করি এবং সকল প্রকারের পাপকর্ম ত্যাগ করে সত্যের পথে চলি। সৎ ভাবে জীবন জাপন করি সকলের সত্য ও মঙ্গলের জয় হোক।
আমার পোস্টটি সম্পূর্ণ পড়বেন যদি ভালো লেগে তাকে তাহলে সকলের কাছে শেয়ার করবেন। আর যদি ভালো না লেগে তাকে তাহলে শাস্ত্র নিয়ে সুস্থ মস্তিষ্কে পর্যালোচনা মাধ্যমে আমার সাথে ধর্মালোচনা করুন!
ওঁ শান্তি ওঁ শান্তি ওঁ শান্তি।।
জয় শ্রীরাম
হর হর মহাদেব

SVS
চট্টগ্রাম বিভাগীয় কর্মী

শ্রী বাবলু মালাকার

(সনাতন বিদ্যার্থী সংসদ, চট্টগ্রাম)
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
নবীনতর পূর্বতন