কল্পনার অতীত গুপ্তধনের ভান্ডার যে রহস্যময় মন্দির। না পড়লে আপনার বিশ্বাস হবে না।

দ্য মিস্টিরিয়াস ডোর,পদ্মনাভাস্বামি টেম্পেল

এই পৃথিবীতে এত রহস্য লুকিয়ে রয়েছে যা আমরা কল্পনাও করতে পারি না। দ্য মিস্টিরিয়াস ডোর, পদ্মনাভাস্বামি টেম্পেল। ভারতের কেরালা রাজ্যে অবস্থিত এই মন্দির পৃথিবীর সবচেয়ে পুরনো এবং সবচেয়ে রহস্যময় মন্দিরগুলোর মধ্যে একটি। এই মন্দির পৃথিবীর সবচেয়ে ধনী মন্দির কিন্তু পৌরাণিক এবং এর দিক থেকে এটি যত বেশি সুপরিচিত তার থেকে বেশি পরিচিত এর পেছনে লুকিয়ে থাকা রহস্যের জন্য। আসলে এই মন্দিরে এমন কিছু রহস্য লুকিয়ে আছে যা এই মন্দিরটিকে অন্যান্য মন্দিরগুলো থেকে আলাদা করে তোলে। 

প্রাচীনকাল থেকেই মানুষ মনে করত এই মন্দিরের নিচে গুপ্তধন লুকানো আছে। এই মন্দিরের ভেতরে অনেকগুলো গুপ্ত দরজা আছে। যেগুলো কখনোই খোলা হয়নি। খোঁজ করার পর জানা যায় যে, এই মন্দিরের মোট ছয়টি গুপ্ত দরজা আছে। কিন্তু কেউ জানে না যে কি রহস্য লুকিয়ে রয়েছে এই দরজার পেছনে। ২০১১ সালের সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে এই মন্দিরের দরজাগুলো একের পর এক খোলা হয়। তবে মোট ৫টি দরজা খোলা হয়। এই দরজার  পেছনে যা পাওয়া গিয়েছিল তা হতবাক করে দিয়েছিল। এই দরজার পেছনে পাওয়া যায় প্রচুর পরিমাণে সোনা ও সোনার তৈরি অসংখ্য প্রাচীন মুদ্রা যার মূল্য কয়েকশো কোটি নয় কয়ে  হাজার কোটি অর্থাৎ মানুষ যা প্রাচীনকাল থেকে শুধু গল্প ছিল না, তারা যে গল্প শুনে এসেছিল এই মন্দিরের গুপ্তধনের ব্যাপারে তা আসলেই সত্যি ছিল। 


আর এই পাঁচটি দরজা খোলার পর সেই গুপ্তধন তাদের চোখের সামনে ছিল কিন্তু ছয় নম্বর দরজাটির ব্যাপারে কেউ কোনো উল্লেখ করেননি। শেষ দরজা অর্থাৎ ছয় নম্বর দরজা যার নাম ভোল্ট বি, সেটি ও অন্যান্য দরজাগুলোর মতই ছিল। কিন্তু এই দরজাটি অন্যান্য দরজার তুলনায় সবচেয়ে বেশি রহস্যময় ছিল। এই দরজার ওপরে দুটি সাপের মূর্তি খোদাই করা ছিল। সেখানকার মানুষ মনে করত এটি একটি সতর্কবার্তা অর্থাৎ ছয় নম্বর দরজাটি যেন কেউ খোলার চেষ্টা না করে। কারণ  সাপ এই দরজাটিকে পাহারা দিচ্ছে।


মন্দিরের নিচে গুপ্তধন
চেম্বারে পাওয়া গুপ্তধন



সবচেয়ে রহস্যময় ব্যাপারটি হলো, এই দরজাতে না কোন চাবির গর্ত আছে না কোন এমন জিনিস যার সাহায্যে এই দরজা খোলা যায়। অর্থাৎ এটি একটি এমন দরজা যাকে সহজে কেউ খুলতে পারবে না। 
বলা হয়ে থাকে, এই দরজাটা একমাত্র ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী খোলা সম্ভব। এটিকে একটি মন্ত্র দারা খোলা যেতে পারে, যাকে গারুদা মন্ত্র বলা হয়ে থাকে। আর এই দরজাটি সেই পবিত্র মানুষই খুলতে পারবে যার মনের শক্তি সবচেয়ে বেশি এবং যিনি মহান। আর মনে করা হয় সেই মহান মানুষের জন্ম হয়নি যিনি দরজাটি খুলতে পারবেন। কেউ যদি জোর করে এই দরজাটি খুলে তাহলে তার জীবন অভিশপ্ত হয়ে যাবে। আর সেই জন্যই এই দলটিকে পুনরায় সিল করে দেয়া হয়। আজ পর্যন্ত কেউ জানে না এই দরজার পেছনে কী রহস্য লুকিয়ে রয়েছে। কিন্তু এর আগেও বহুবার এই দরজা থেকে খোলার চেষ্টা করা হয়েছিল। 
আজ থেকে ১০০ বছর এর আগে ১৯০৮ সালে এই দরজা খোলার প্রথম চেষ্টা করা হয়েছিল। সেই সময় যখন তারা প্রথম দরজাটিকে খোলার চেষ্টা করে তখন প্রচুর পরিমাণে সাপ তাদের সামনে বেরিয়ে আসে। যার ফলে তারা দরজা খুলতে পারেনি। কিন্তু এরপর ১৯৩১ সালে আরো একবার এই দরজাগুলোকে খোলার চেষ্টা করা হয় এবং এইবার একটি দরজা খোলাও হয় আর ঐ দরজার পেছন থেকে বেরিয়ে আসে প্রচুর পরিমাণে সোনা। এর মানে হচ্ছে প্রথম দরজাটি ১৯৩১ সালেই খোলা হয়ে গিয়েছিল কিন্তু তারা বাকি দরজাগুলো কেন খুলতে পারিনি তার কারণ কেউ জানে না। 
এবার একটি রহস্য সামনে উঠে আসছে। ১৯০৮ সালে দরজা খোলার সময় প্রচুর পরিমাণে সাপ দেখা গিয়েছিল। কিন্তু ১৯৩১ সালে যখন পুনরায় চেষ্টা করা হয় তখন কিন্তু কোন সাপ দেখা যায়নি। তাহলে যখন এইবার কোন বাধা ছিল না যখন কোন সাপই তাদের সামনে আসেনি তাহলে তারা প্রথম দরজাটি খোলার পর অন্যগুলো খোলার চেষ্টা করেনি। কিছু মানুষ মনে করেন যে জিনিসগুলো এই দরজার পেছনে রয়েছে সেগুলো সব দৈবীয় জিনিস। মনে করা হয়, এই জিনিসগুলো মানুষের হাতে আসা উচিত নয়। আর এই জন্যই হয়তো তারা বাকি দরজাগুলো খোলা হয়নি এবং হয়তো তারা প্রথম দরজাটি খোলার পরেও দরজা বন্ধ করে দিয়েছিল।


পদ্মনাভাস্বামি
সোনার ভগবান বিষ্ণু
আর এই রহস্যের জন্যই মানুষ এই মন্দিরের প্রতি আকর্ষিত হয়ে পড়ে এবং প্রচলিত হয়ে যায় যে এই মন্দিরে প্রচুর পরিমাণে গুপ্তধন লুকানো রয়েছে। এ জন্যই সরকারের লক্ষ্য এই মন্দিরের উপর। এত কিছু করার পরেও এই মন্দিরের ৫টি দরজাকে ২০১১ সালে খোলা হয়। ১৯৩১ সালের পর অর্থাৎ প্রায় ৮০ বছর পর খোলা হয়। কিন্তু ছয় নম্বর দরজাটি আজ পর্যন্ত কেউ খুলতে পারেনি। রহস্যময় ব্যাপারটি হলো, ২০১১ সালে এই দরজা খোলার সময় কোন সাপের দেখা পাওয়া যায়নি। আর কোনো বাধা না পাওয়ায় ভারত সরকার এই মন্দিরের পাঁচটি গুপ্ত দরজাকে সম্পূর্ণ খুলে দেয়। কিন্তু আজও ছয় নম্বর দরজাটিকে খোলা সম্ভব হয়নি। 


এই দরজার সবচেয়ে আলোচিত ব্যাপারটি হলো অন্য পাঁচটি দরজার মত এই ছয় নম্বর দরজাটিও ভারত সরকার খোলার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু যখনই এটি খোলার চেষ্টা করা হয় তখন সেখানকার মানুষ সরকারের এই কাজে বাধা দেয়। আর তারা কোর্টে আপিল করে এই কাজ বন্ধ করার জন্য। মন্দিরের সঙ্গে যুক্ত মানুষেরা কেউ চাইছিল না যে এই ছয় নম্বর দরজাটি কেউ জোর জবরদস্তি খুলুক। আর তার কারণ হলো তারা একটি রিচুয়াল করেছিল পণ্ডিতেরা ভগবানকে জিজ্ঞেস করে যে ভগবান কি চাইছেন, তিনি এই দরজা খোলার অনুমতি দিচ্ছেন কিনা আর এরপর তারা জানতে পারে ভগবান চায়না এই দরজা খোলা হোক। 
যারা এই রিচুয়ালটি করেছিল সেই মানুষদের কথা অনুযায়ী এই দরজা খোলার পরিনাম অনেক ভয়ংকর হতে পারে। যদি এই ছয় নম্বর দরজাটি জোরজবরদস্তি খোলা হয় তাহলে সুনামির মতো ভয়ঙ্কর প্রলয় আসবে এবং চারদিকে ধ্বংসলীলা চালু হয়ে যাবে। আর সবকিছু নিঃশেষ হয়ে যাবে এমনটাই তারা মনে করে। হিন্দু ধর্মালম্বিদের মতে এই দরজাটি কখনই খোলা উচিত না।



By: Daily Bangladesh
নবীনতর পূর্বতন