এক ঈশ্বরের বহু স্বরূপের গুপ্ত রহস্য জানুন।

তিনি এক ।। সেই এক কে বহু বলে। জানুন আমরা কেন বহু বলি। ঈশ্বর এক


সনাতন ধর্মে অনাদি অনন্ত ব্রহ্মের উপাসনা পঞ্চমতে ও পথে বিভজিত যথা- শাক্ত, শৈব, সৌর, গাণপত্য এবং বৈষ্ণব।
মত ভিন্ন হলেও লক্ষ্য সেই ব্রহ্ম।


কিন্তু সনাতন সমাজের এসব সম্প্রদায়ের মধ্যে বিভেদ লেগে আছে।
বৈষ্ণবরা বলে বিষ্ণু বা কৃষ্ণ শ্রেষ্ঠ।
শৈবরা বলে শিব শ্রেষ্ট।
শাক্তরা বলে শক্তি বা কালী শ্রেষ্ট।
এভাবে যে যে সম্প্রদায়ের তার ইষ্টকে বড় হিসেবে দেখতে ব্যস্ত।
☞চলুন এ বিভেদের সূত্রপাত নিজেরাই উপলব্ধি করি....
☀বৈষ্ণব সম্প্রদায়ের শ্রেষ্ট গ্রন্থ শ্রীমদ্ভাগবতপুরাণে.....
"নদীগণের মধ্যে গঙ্গা, দেবগণের মধ্যে বিষ্ণু এবং বৈষ্ণবগণের মধ্যে শম্ভু(শিব) যেরুপ শ্রেষ্ঠ, সেইরুপ পুরাণগণের মধ্যে এই শ্রীমদ্ভাগবত শ্রেষ্ঠ হইয়া থাকে। ☞(ভাগবত- ১২/১৩/১৬)

"কৃষ্ণস্তু ভগবান্ স্বয়ম্।"

অর্থাৎ শ্রীকৃষ্ণ স্বয়ং ভগবান।



☞(ভাগবত-১.৩.২৮)

☞এখানে শিব পরম বৈষ্ণব অর্থাৎ শ্রীকৃষ্ণ বা শ্রীবিষ্ণু ঈশ্বর,শিব হলেন তার ভক্ত।
☀এবার আসুন শৈব সম্প্রদায়ের শ্রেষ্ট গ্রন্থ শিবপুরাণে..
☞শিবপুরাণ, ধর্মসংহিতা, ২য় অধ্যায়ে উল্লেখ আছে
শ্রীকৃষ্ণ উপমন্যুর নিকট শিব মন্ত্রে দীক্ষা গ্রহনের কথা।
"সমস্থ জগত যে নির্গুণ পরমাত্মা হইতে উৎপন্ন হইয়াছে।তাহারই নাম শিব। ইহা বেদ বেদান্ত বেত্তা অবগত আছেন,পুরুষের(বিষ্ণুর) সত্তা ও প্রকৃতি সেই শিব হইতে উৎপন্ন হইয়াছেন।
☞(শিবপুরাণ,জ্ঞানসংহিতা,হ
সপ্তসপ্ততিতম অধ্যায়,৩-৪)
☞আবার দেবীপুরাণেও দেখা যায়....
"কৃষ্ণ তাঁহার পুত্রের নিমিত্ত তপস্যার কৃতনিশ্চয় হইয়া যেখানে শিবভক্ত উপমন্যু মুনি অবস্থিতি করিতেছিলেন,সেই স্থানে গমন করিলেন।তারপর পুত্র কামনায় উপমন্যুকে দীক্ষাগুরু নিরুপিত করিয়া শিব মন্ত্র গ্রহণ ও মস্তক মুন্ডন পূর্ব্বক দন্ডী হইয়াছিলেন।তথায় প্রথম মাসে ফলমাত্র আহার করিয়া শিবের ধ্যান পরায়ন এবং শিবমন্ত্র জপে নিরত হইয়া উগ্রতর তপস্যা করিয়াছিলেন।"
☞(দেবীভাগবত ৪র্থ স্কন্ধ, পঞ্চবিংশোহধ্যায়,৩০-৩১ )
শ্রীকৃষ্ণ পরমেশ্বর শিবকে স্তব করলেন
"হে দুঃখবিনাশন নীলকণ্ঠ! আমি মানুষ জন্ম প্রাপ্ত হইয়া অত্যন্ত খিন্ন হইয়াছি; হে ভব! ভবভয়ে ভীত হইয়া আপনার স্মরণ গ্রহণ করিলাম,এক্ষণে আপনি আমাকে পরিত্রাণ করুন।"
☞(দেবীভাগবত ৪র্থ স্কন্ধ, পঞ্চবিংশোহধ্যায়,৪৩ )
☞এখানে শিবই পরমেশ্বর। শ্রীকৃষ্ণ তার পরম ভক্ত শৈব।
☀আসুন এবার শাক্ত সম্প্রদায়ের ইষ্টদেবী মহামায়া সম্পর্কে....
শ্রীকৃষ্ণ কৃতাঞ্জলি হইয়া বলিলেন,
"হে দেবী! যদি আপনি শংকরের ন্যায় আমার উপর তুষ্ট হইয়া থাকেন, তাহা হইলে ব্রাহ্মণের উপর আমার যেন কদাচ দ্বেষ না হয় নিরন্তর তাহাদিগকে পূজা করিতে পারি।প্রবৃত্তি জন্মেও মাতা পিতা আমার উপর নিয়ত তুষ্ট থাকেন।আমি সর্বজ্ঞ হইয়া যেন সকল ভূতবিষয়ে আনুকূল্য ভজনা করিতে পারি ও আপনার দর্শণ হেতু আমার কুল সন্ততি যেন শৌর্য্যাদি গুণশালিনী হয়।"
☞(শিবপুরাণ,ধর্মসংহিতা,২য় অধ্যায়,৬১-৬৪)
"হে দেবি, হে শরণাগতের দুঃখ বিনাশিণী, তুমি প্রসন্না হও। হে অখিল জগতের জননী, তুমি প্রসন্না হও। হে দেবি বিশ্বেশ্বরী, প্রসন্না হয়ে তুমি জগত পালন কর, কেননা তুমিই চরাচর জগতের ঈশ্বরী।"
☞(শ্রীশ্রীচন্ডী,একাদশ অধ্যায়)
এখানে দেবীই ঈশ্বর।
এবার একটু ভাবুন ত সবই পুরাণ।কিন্তু যে পুরাণ যে ইষ্টকে নিয়ে রচিত সেখানে সে ইষ্টকে ঈশ্বর বলা হচ্ছে।
একজন ছেলে তার মায়ের কাছে শ্রেষ্ট সন্তান।
বৌয়ের কাছে শ্রেষ্ট স্বামী।
বোনের কাছে শ্রেষ্ট দাদা।
আধোতে সে একজন।
☀☀☀☀☀☀
প্রতিটি পুরাণে আবার সে একত্বের ছোঁয়া পাওয়া যায়......
☀☀☀☀☀☀
"প্রকৃতির তিনটি গুণ-সত্ত্ব, রজ এবং তম। পরমেশ্বর এক হলেও এই তিনটি গুণের প্রভাবে বিশ্বের সৃষ্টি -স্থিতি-লয়ের জন্যে ব্রহ্মা-বিষ্ণু-মহেশ্বর রূপ ধারণ করেন।"
☞(শ্রীমদ্ভাগবতের ১.২.২৩)
☞বিষ্ণু পুরাণে (১/২/৬৬) বলা হয়েছে ---
ঐ একমাত্র ভগবান সৃষ্টি , পালন ও সংহার করার জন্য ব্রহ্মা ,
বিষ্ণু ও শিব নাম প্রাপ্ত হয়
☞বরাহ পুরাণে (৭০/৪০) বলা হয়েছে ---
যিনি বিষ্ণু , তিনিই ব্রহ্মা , যিনি ব্রহ্মা তিনিই শিব । যারা
আমাকে ব্রহ্মা ও শিব থেকে আলাদা ভাবে ভজনা করে তারা পাপী ।
☞ ড. মহানামব্রত ব্রহ্মচারীর লেখা জগজ্জননী কালীমাতার তত্ত্ব নামক একটি ছোট্ট বইতে ব্রহ্মচারীজী শাক্ত বৈষ্ণব মিলনের একটি অসাধারণ রেফারেন্স দিয়েছেন বৈষ্ণব শিরোমণি ষড় গোস্বামীর অন্যতম শ্রীজীব গোস্বামীর লেখা থেকে (পৃষ্ঠা -১১)।
যঃ কৃষ্ণঃ সৈব দুর্গা স্যাৎ
যা দুর্গা কৃষ্ণ এব সঃ।
অর্থাৎ কৃষ্ণ, সেই দুর্গা এবং যিনি দুর্গা তিনিই কৃষ্ণ।
যেই শ্যাম, সেই শ্যামা। যেই ব্রহ্ম, সেই শক্তি; যেই লক্ষ্মী, সেই নারায়ণ ; যেই শিব, সেই শক্তি ; যেই রাধা, সেই কৃষ্ণ। একই সত্ত্বার শুধুমাত্র প্রকাশ বিভিন্ন। আর আমরা এই দৃশ্যমান বিভিন্নতায় মায়ার প্রভাবে বিভ্রান্ত হয়ে যাই।
☞'ব্রহ্ম-শক্তি'র অভেদ-তত্ত্বটি বোঝাতে গিয়ে শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংস তাঁর শ্রীম লিখিত কথামৃতে বলেছেন-
''ব্রহ্ম আর শক্তি অভেদ, এককে মানলেই আর-একটিকে মানতে হয়। যেমন অগ্নি আর তার দাহিকাশক্তি; ... অগ্নি মানলেই দাহিকাশক্তি মানতে হয়, দাহিকাশক্তি ছাড়া অগ্নি ভাবা যায় না; আবার অগ্নিকে বাদ দিয়ে দাহিকাশক্তি ভাবা যায় না। সূর্যকে বাদ দিয়ে সূর্যের রশ্মি ভাবা যায় না।"
"আদ্যাশক্তি লীলাময়ী; সৃষ্টি-স্থিতি-প্রলয় করছেন। তাঁরই নাম কালী। কালীই ব্রহ্ম, ব্রহ্মই কালী! একই বস্তু, যখন তিনি নিষ্ক্রিয় - সৃষ্টি, স্থিতি, প্রলয় কোন কাজ করছেন না -এই কথা যখন ভাবি, তখন তাঁকে ব্রহ্ম বলে কই। যখন তিনি এই সব কার্য করেন, তখন তাঁকে কালী বলি, শক্তি বলি। একই ব্যক্তি নাম-রূপভেদ। ''
সবশেষে পবিত্র বেদে এ নিয়ে কি বলা হয়েছে চলুন দেখি....
"ইন্দ্রং মিত্রং বরুমগ্নিণত্বা মাহূরথো দিবাঃ স সুপর্ণো গরুত্মান্ ।
একং সৎ বিপ্রা বহুধা বদন্তি অগ্নিং যমং মাতরিশ্বানমাহুঃ’।।
☞ (ঋগ্বেদ-১/১৬৪/৪৬)
অর্থাৎ : একই পরম তত্ত্ব এই আদিত্যকে মেধাবীগণ বা তত্ত্বদর্শী ব্রাহ্মণগণ ইন্দ্র, মিত্র, বরুণ ও অগ্নি নামে অভিহিত করেন। ইনি এক হলেও একে বহু বলে বর্ণনা করে। একে অগ্নি, যম ও বায়ু বা মাতরিশ্বাও বলা হয়।
এবার আপনিই বিচার করুন
☀ যে কালী সেই কৃষ্ণ ☀

বিজয় বিদ্যার্থী


★★★★★★★★

সনাতন বিদ্যার্থী সংসদ
নবীনতর পূর্বতন