শ্রীকৃষ্ণের ব্রহ্মযোগে প্রাপ্ত জ্ঞানীই শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা। যা স্পষ্ট বলেছেন শ্রীকৃষ্ণ নিজেই।

শ্রীকৃষ্ণের ব্রহ্মযোগে প্রাপ্ত জ্ঞানীই শ্রীমৎভাগবত গীতা। যা স্পষ্ট বলেছেন শ্রীকৃষ্ণ নিজেই।
শ্রীমদ্ভদগীতা মহাভারতের ভীষ্মপর্বের শ্রীকৃষ্ণ ও অর্জুনের কথোপকথন নিয়ে রচিত গ্রন্থ যা বেদের পর বৈদিক জ্ঞানের সারাংশ হিসেবে মর্যাদা দখল করে আছে। শ্রীকৃষ্ণ যখন অর্জুনকে যুদ্ধের ঠিক আগমুহূর্তে উপদেশ দিয়েছিলেন তখন তিনি যোগযুক্ত অবস্থায় ছিলেন সে কথা আমরা জানতে পারি মহাভারতের আশ্বমেধিক পর্বের ১৭ তম অধ্যায় পাঠ করলে। আসুন আরেকটিবার সেই কথোপকথন আবার শুনি ☞(মহাভারত,আশ্বমেধিক পর্বের ১৭ তম অধ্যায়) অর্জুন বললেন, মহাবাহো! দেবকীনন্দন! যখন সংগ্রামের সময় উপস্থিত ছিলো, সেই সময় আমার মহাত্মার জ্ঞান এবং ঈশ্বরীয় স্বরূপের দর্শন হয়েছিলো।১৭.৫ কিন্তু কেশব! নিজ সৌহার্দ্যবশতঃ প্রথমে আমাকে যে জ্ঞানের উপদেশ দিয়েছিলেন, আমার সেসব জ্ঞান ওই সময় বিচলিতচিত্ত হওয়ার কারণে নষ্ট হয়ে গিয়েছে।১৭.৬ মাধব! সেই বিষয় শোনার জন্য আমার মন বারংবার উৎকন্ঠিত হচ্ছে। আপনি শীঘ্রই দ্বারকা গমন করবেন, অতঃ সেই বিষয় আমাকে শুনিয়ে দিন।১৭.৭ এ কথা শুনে শ্রীকৃষ্ণ অত্যন্ত ব্যথিত হয়ে অর্জুনকে বললেন - হে অর্জুন! সেই সময় তোমাকে অত্যন্ত গোপনীয় জ্ঞানের শ্রবন করিয়েছিলাম। নিজ স্বরুপভূত ধর্ম সনাতন পুরুষোত্তমত্বের পরিচয় দিয়েছিলাম এবং (শুক্ল কৃষ্ণ গতির নিরুপন করে) সম্পূর্ণ নিত্য লোকেরও বর্ণনা করেছিলাম। কিন্তু তুমি যে নিজে না বোঝার কারণে সেই উপদেশের স্মরণ করতে পারছো না, ইহা আমার অত্যন্ত অপ্রিত। সেই কথার এখন পুরোপুরি স্মরণ সম্ভব নয়।১৬.৯-১০।। পান্ডুনন্দন! নিশ্চয়ই তুমি বড় শ্রদ্ধাহীন, তোমার বুদ্ধি অত্যন্ত মন্দ। ধনন্জয়! এখন আমি সেই উপদেশের বর্ণনা করতে পারবো না।১৭.১১ "সেই ধর্ম ব্রহ্ম পদের প্রাপ্তি করানোর জন্য পর্যাপ্ত ছিলো। তাহার সারের ধর্ম সেই রূপে পূনরায় প্রদান করা এখন আমার বশের কথাও নয়।১৭.১২।। শ্রীকৃষ্ণ বললেন! সেই সময় আমি যোগযুক্ত হয়ে পরমাত্মতত্ত্বের বর্ণনা করেছিলাম। এখন সেই বিষয় এর জ্ঞান করানোর জন্য আমি এক প্রাচীন ইতিহাসের বর্ণনা করছি।(১৭.১৩) উপরোক্ত কথোপকথন স্পষ্টত ইঙ্গিত দেয় শ্রীকৃষ্ণের দেওয়া জ্ঞানই ব্রহ্মপ্রদত্ত জ্ঞান। ☞শ্রীমদ্ভগবদগীতা ১৮.৬২ শ্লোকে আরো স্পষ্ট করে বলা হয়েছে। "সঞ্জয় বললেন,ব্যাসদেবের কৃপায় এই পরম গোপনীয় যোগের উপদেশ আমি স্বয়ং যোগেশ্বর শ্রীকৃষ্ণের কাছ থেকে শ্রবণ করেছিলাম।" একফোঁটা বৃষ্টি যখন উপর থেকে পতিত হয়, তখন সেটি এক ফোঁটা বৃষ্টিকণা মাত্র।সমুদ্রে পতিত হয়ে মিশে গেলে তখন বৃষ্টির ফোটাকে সমুদ্র থেকে আলাদা করা সম্ভব নয়।তখন বৃষ্টির ফোটা বলতে পারে " আমিই সমুদ্র" তেমনি একজন সাধক যোগযুক্ত হয়ে ব্রহ্মে লীন হয়ে বলেন


"অহং ব্রহ্মাস্মি" অর্থাৎ আমিই ব্রহ্ম। আমরা পবিত্র বেদের দিকে একটু লক্ষ্য করলে ব্যাপারটি আরো স্পষ্ট হবে। বেদের জ্ঞান ঈশ্বরের জ্ঞান। ঋষিদের যোগযুক্ত অবস্থায় ধ্যানলব্ধে প্রাপ্ত এ জ্ঞানকে আমরা ব্রহ্মজ্ঞান হিসেবে আত্মস্থ করি। ছান্দোগ্য উপনিষদেও সনৎকুমার তাঁর শিষ্য নারদকে বলেছেন- "আমিই অধো ভাগে, আমিই উর্ধ্বে, আমিই পশ্চাতে, আমিই সম্মূখে, আমিই দক্ষিণে, আমিই উত্তরে-আমিই এই সমস্ত। (ছান্দোগ্যোপনিষদ ৭।২৫।১) "আমি সকল লোকের ঈশ্বরী, ধনপ্রদানকারিণী; আমি পরব্রহ্মজ্ঞানী; যাঁদের যজ্ঞ করা হয়, তাঁদের মধ্যে আমি সর্বশ্রেষ্ঠা (অর্থাৎ, দেবশ্রেষ্ঠা); বহু দেশের অধিবাসীরা সর্বরূপে সর্বত্র বিরাজমানা আমাকে আরাধনা করে থাকেন।।" (ঋগ্বেদ, দশম মণ্ডল, দশম অনুবাক, ১২৫তম সূক্ত) এ মন্ত্রের দ্রষ্টা মহর্ষি অম্ভৃণের কন্যা ব্রহ্মবাদিনী বাকদেবী। তাহলে একজন সাধারণ ব্যক্তি বলতেই পারেন বেদের মন্ত্রগুলো ঋষিদের মুখনিঃসৃত ছিল। কিন্তু এ বাণীকে আমরা ঈশ্বরের বাণী হিসেবে গ্রহণ করি। গীতার মত বেদের প্রতিটি মন্ত্রই ঋষিদের ধ্যানলব্ধ। তাহলে সেই জ্ঞানকে ব্রহ্মজ্ঞান হিসেবে গ্রহণ করলে, কেন সেই অজ্ঞানীরা গীতার পবিত্রজ্ঞানকে ব্রহ্ম জ্ঞান হিসেবে গ্রহণ করেনা?
☞শ্রীমদ্ভগবতগীতায় সেই পরমব্রহ্মের শরণাপন্ন হতে নির্দেশ দিলেন


ঈশ্বরঃ সর্বভূতানাং হৃদ্দেশের্জুন তিষ্ঠতি৷
ভ্রাময়ন্ সর্বভূতানি যন্ত্রারূঢ়ানি মায়য়া৷৷
শ্রীমদ্ভগবতগীতা ১৮.৬১


অর্থ: হে অর্জুন, পরমেশ্বর ভগবান সমস্ত জীবকে দেহরুপ যন্ত্রে আরোহণ করিয়ে মায়ার দ্বারা ভ্রমণ করান।

তমেব শরণং গচ্ছ সর্বভাবেন ভারত৷
তত্প্রসাদাত্পরাং শান্তিং স্থানং প্রাপ্স্যসি শাশ্বতম্৷৷
শ্রীমদ্ভগবতগীতা১৮.৬২

অর্থ: হে ভারত, সর্বত ভাবে তার শরণাগত হও। তার কৃপায় তুমি পরাশক্তি লাভ করবে এবং তার নিত্যধাম প্রাপ্ত হবে।
আশা করি এ ব্রহ্মভাবে আসক্ত হয়ে ব্রহ্মজ্ঞানরপ গীতা পাঠ করলে আপনার জীবন আলোকিত হবে।

এবার আপনিই বিচার করুন



বিজয় বিদ্যার্থী

★★★★★★★★

সনাতন বিদ্যার্থী সংসদ
নবীনতর পূর্বতন