শ্রীনৃসিংহ চতুর্দশী মাহাত্ম্য

শাস্ত্রানুসারে ভগবান শ্রীনৃসিংহদেবের আবির্ভাব তিথি হলো, 'শ্রীনৃসিংহ চতুর্দশী তিথি'। এ তিথিটি মাহাত্ম্যমণ্ডিত তিথি। অষ্টাদশ পুরাণের অন্যতম ব্রহ্ম পুরাণে শ্রীনৃসিংহ চতুর্দশী তিথির মাহাত্ম্য প্রসঙ্গে ব্রহ্মা বলেছেন :

তস্মাত্তং মুনিশার্দ্দুলা ভক্ত্যা সম্পূজয়েৎ সদা ।
মৃগরাজং মহাবীর্য্যং সর্বকামফলপ্রদম্‌ ।।
বিমুক্তঃ সর্বপাপেভ্যো বিষ্ণুলোকং স গচ্ছতি ।
ব্রাহ্মণাঃ ক্ষত্রিয়া বৈশ্যাঃ স্ত্রিয়ঃ শূদ্রান্ত্যজাতয়ঃ।।
সম্পূজ্য তং সুরশ্রেষ্ঠং ভক্ত্যা সিংহবপুর্ধরম্‌ ।
মুচ্যন্তে চাশুভৈর্দ্দূঃখৈর্জন্মকোটিসমুদ্ভবৈঃ ।।
( ব্রহ্ম পুরাণ: ৫৮.৫৮-৬০)

"ব্রহ্মা বলছেন, হে মুনিশ্রেষ্ঠগণ ! এমন প্রভাবসম্পন্ন , মহাবীর্য্য , সর্বকামফলদাতা নরসিংহ দেবকে ভক্তি ভরে সর্বদা পূজা করা জীবের কর্তব্য। তাঁকে পূজা করলে জীব সর্বপাপ হতে মুক্ত হয়ে বিষ্ণুলোকে গমন করে। ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য, শূদ্রাদিসহ সকল নারীজাতি ভক্তিপূর্বক দেবশ্রেষ্ঠ ভগবান নরসিংহকে পূজা করলে তাঁরা কোটি জন্মের ভয়ংকর দুঃখ হতে পরিত্রাণ পায়।

সম্পূজ্য তং পুরশ্রেষ্ঠং প্রাপ্নুবন্ত্যভিবাঞ্ছিতম্ । 
দেবত্বমমরেশত্বং গন্ধৰ্বত্ব চ ভো দ্বিজাঃ।।
যক্ষবিভাধরত্বং চ তথাচ্চাভিবাঞ্ছিতম্।
দৃষ্টা তত্ত্বা নমস্কৃত্বা সম্পূজ্য নরকেসরীম্।।
প্রাপ্নুবন্তি নরা রাজ্যং স্বৰ্গং মোক্ষং চ দুর্লভম্।
নরসিংহং নরো দৃষ্টা লভেদভিমত ফলম্ ॥
(ব্রহ্ম পুরাণ: ৫৮.৬১-৬৩)

"হে দ্বিজগণ! সেই সুরশ্রেষ্ঠকে পূজা করলে অভীষ্ট ফল লাভ হয়। এমন কি, গন্ধৰ্বত্ব, দেবত্ব বা দেবেন্দ্রত্ব লাভও তখন সুদুর্লভ হয় না। নর কেশরীকে দর্শন, স্তবন, পূজন, এবং প্রণিপাত করলে যক্ষত্ব, বিদ্যাধরত্বাদি অন্যান্য বাঞ্ছিত পদও প্রাপ্ত হওয়া যায়। নরগণ ভগবান নরসিংহের অর্চনা করে রাজ্য, স্বর্গ এবং সর্বশ্রেষ্ঠ মোক্ষও লাভ করতে পারে।"

নির্মুক্তঃ সৰ্বপাপেভ্যো বিষ্ণুলোকং স গচ্ছতি।
সকৃদৃষ্টা তু তং দেবং ভক্ত্যা সিংহবপুর্ধরম্ ॥
মুচ্যতে চাশুভৈর্দুঃখৈর্জন্মকোটি সমুদ্ভবৈঃ।
সংগ্রামে সঙ্কটে দুর্গে চোরব্যাঞ্জাদিপীড়িতে॥
কান্তারে প্রাণসন্দেহে বিষবহ্নিজলেষু চ।
রাজাদিভ্যঃ সমুদ্রেভ্যো গ্রহরোগাদিপীড়িতে।।
স্মৃত্বা তং পুরুষঃ সর্বৈ রাজগ্রামৈর্বিমুচ্যতে।
সূর্য্যেদয়ে যথা নাশং তমোঽভ্যেতি মহত্তরম্।।
তথা সন্দর্শনে তস্য বিনাশং যান্তুপদ্ৰবাঃ।
গুটিকাঞ্জনপাতাল্পাদুকে চ রসায়নম্।।
নরসিংহে প্রসন্নে তু প্রাপ্নোত্যন্যাংশ্চ বাঞ্ছিতান।
যান্ যান্ কামানভিধ্যায়ন্ ভজতে নরকেসরীম।।
তাংস্তান্ কামানবাপ্নোতি নরো নাস্ত্যত্র সংশয়ঃ।
দৃষ্টা তং দেবদেবেশং ভক্ত্যোপূজ্য প্রণম্য চ।।
দশানামর্শ্বমেধানাং ফলং দশগুণং লভেৎ।
পাপৈঃ সর্বৈর্বিনির্মুক্তো গুণৈঃ সর্বৈরলঙ্কৃত।।
(ব্রহ্ম পুরাণ: ৫৮.৬৪-৭১)

"একবারমাত্র তাঁকে দর্শন করলেই নর সর্বপাপ হতে মুক্ত হয়ে বিষ্ণুলোকে উপনীত হয়। ভগবান নরসিংহের দর্শনে নরগণের কোটি জন্মের সঞ্চিত অশুভ পাপরাশি বিদূরিত হয়ে যায়। সংগ্রাম, সঙ্কট, দুর্গম প্রদেশ, চোর ও ব্যাঘ্রাদির উৎপীড়ন, প্রাণসংশয়, বিষ, বহ্নি, জল, রাজাদি ও সমুদ্র হতে ভয়, গ্রহ রোগাদির পীড়া ইত্যাদি সকল প্রকারের সঙ্কটেই নরসিংহ দেবকে স্মরণ করলে তিনিই রক্ষা করেন। সূর্যোদয়ে যেমন তমোরাশি বিনষ্ট হয়, তেমনি ভগবান নারসিংহদেবের দর্শনে জীবের সকল প্রকারের উপদ্রব বিনষ্ট হয়ে যায়। গুটিকা, অঞ্জন, পাতাল ও রসায়ন প্রভৃতি নরের যাবতীয় বাঞ্ছিত বস্তু নরসিংহ দেবের প্রসাদে প্রাপ্ত হওয়া যায়। নর নরকেশরী ভগবান নৃসিংহদেবকে ভজনা করলে যাবতীয় কাম্য বস্তুই লাভ করতে পারে, এতে কোন সন্দেহ নেই। সেই দেবদেবকে দেখে ভক্তিভরে পূজা ও প্রণাম করলে শতাবার অশ্বমেধের ফললাভ হয়। তাঁর সকল প্রকারের পাপ বিনষ্ট হয়ে সে সর্বগুণের গুণমণ্ডিত হয়ে যায়।"

শ্রীনৃসিংহ চতুর্দশী মাহাত্ম্য, Sri Nrisingha Chaturdashi, শ্রীনৃসিংহ

ভগবান নৃসিংহদেবেদের আরাধনাকারী সেই মহাত্মের আর জরা, ব্যাধি এবনং মৃত্যুভয় থাকে না। সে ধীরেধীরে সৰ্বকামসমৃদ্ধ হয়ে যায়। সে মৃত্যুর পরে সুবর্ণবিমানে আরোহণ করে বিষ্ণুলোকে গমন করে। এতে সেই নরের একবিংশতিতমকুল উদ্ধার পায়। এভাবে বিষ্ণুলোকে সেই কল্পের প্রলয় পর্যন্ত বিবিধ প্রকারের স্বর্গসুখ ভোগ করে।

মনোহ্লাদকরং সৌখ্যং যবদাভূতসংপ্লবম্।।
পুণাক্ষয়াদিহায়াতঃ প্রবরে যোগিনাং কুলে।
চতুর্বেদী ভবেদ্বিপ্রো বেদবেদাঙ্গপারগঃ ॥
বৈষ্ণবং যোগমাস্থায় ততো মোক্ষমাবাপুয়াৎ ॥
(ব্রহ্ম পুরাণ: ৫৮.৭৬-৭৮)

"বিষ্ণুলোকে চতুর্ভুজরূপে উত্তম উত্তম ভোগ্য সকল আপ্রলয় কাল পর্যন্ত পরম সুখে উপভোগ করে । অনন্তর পুণ্যক্ষয় হলে, সে পুনরায় যোগীদিগের উত্তম কুলে বেদ বেদাঙ্গ-পারগ চতুররবেদী ব্রাহ্মণের গুণ লাভ করে এই মর্ত্যলোকে জন্মগ্রহণ করে। মনুষ্য জন্ম লাভ করে, বৈষ্ণব যোগ অবলম্বনে করে পরবর্তীতে তিনি মোক্ষলাভ করেন।"

শ্রীকুশল বরণ চক্রবর্ত্তী
সহকারী অধ্যাপক,সংস্কৃত বিভাগ,চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
নবীনতর পূর্বতন