অ্যাঙ্কর ওয়াট এখন বৌদ্ধ মন্দির। যা হিন্দুদের বিভেদের ফল।

অ্যাঙ্কর-ওয়াট

পৃথিবীর বৃহত্তম মন্দিরটির নাম হচ্ছে 'অ্যাঙ্কর ওয়াট'। এটি একটি বিষ্ণু মন্দির ছিল। এখন তা বৌদ্ধ মন্দির এ পরিণত করা হয়েছে। চতুর্দিকে পরিখা বিশিষ্ট অ্যাঙ্কর ওয়াট আজও জগতের অন্যতম ধর্মস্থান বলে স্বীকৃত। উত্তর-পশ্চিম কম্বোডিয়ার অ্যাঙ্কর শহরে বিখ্যাত এ মন্দিরটি অবস্থিত। দ্বাদশ শতাব্দীর প্রথম দিকে কম্বোডিয়ার খেমার হিন্দু রাজা দ্বিতীয় জয়বর্মণ এ মন্দিরটি নির্মাণ করেছিলেন। রাজা সূর্যবর্মণ ১১১৩ থেকে ১১৫০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত রাজত্ব করে ছিলেন। 
অ্যাঙ্কর ওয়াটের অবস্থান কম্বোডিয়ার উত্তরে। সিয়াম রিয়াপে। অ্যাঙ্কর প্রদেশের রাজধানী সিয়াম রিয়াপ। অ্যাঙ্কর ছিল প্রাচীন খেমার সাম্রাজ্যের রাজধানী। কম্বোডিয়ার অধিবাসীরা প্রধানত খেমার। নবম থেকে ত্রয়োদশ শতাব্দীতে খেমার সাম্রাজ্য গড়ে উঠেছিল। খেমার সাম্রাজ্যের রাজধানী ছিল অ্যাঙ্কর। অ্যাঙ্কর শব্দটি সংস্কৃত নগর শব্দ থেকে উদ্ভূত। সংস্কৃত শব্দের পেছনে অবশ্য কারণ রয়েছে। বাণিজ্য ও অন্যান্য সূত্রে ভারতীয় বৈদিক ধর্ম কম্বোডিয়া অবধি ছড়িয়ে পড়েছিল। খেমার জনগণও সাদরে সেই ধর্ম গ্রহণ করেছিল। আর সেটিই ছিল স্বাভাবিক। কেননা, এর আগে কম্বুজদেশায় (কম্বোডিয়ার পুরনো নাম) জনগণ ছিল সর্বপ্রাণবাদী। অর্থাৎ তারা ধহরসরংস এ বিশ্বাসী ছিল। অপরদিকে ভারতীয় বৈদিক ধর্মটি বৈশিষ্ট্যের দিক থেকে বহু ঈশ্বরবাদী হলেও এর মূলে রয়েছে একেশ্বরবাদ। দীর্ঘকাল ধরে কোনো মানবসংস্কৃতিই সর্বপ্রাণবাদী হয়ে থাকতে পারে না। মানবসংস্কৃতি সব সময়ই একেশ্বরবাদী ধ্যানধারণা গ্রহণ করে। মানবচেতনার বিকাশের জন্যই এমনটা ঘটে বলে মনে হয়। কম্বোডিয়াতেও তাই-ই হয়েছিল। সেখান থেকেই কম্বোডিয়ায় বিষ্ণু অনুসারীদের উত্থান। আর ধর্মীয় বিশ্বাস থেকে খেমার রাজা এই বিখ্যাত মন্দিরটি নির্মাণ করেন।
'অ্যাঙ্কর ওয়াট' মন্দিরটির দৈর্ঘ্য প্রায় ১১৫০ মিটার ১৭০০ গজ এবং প্রস্থ প্রায় ১৪০০ মিটার। জলাভূমির উপর দিয়ে নির্মিত একটি সুন্দর রাস্তা পশ্চিম দিক থেকে মন্দিরে এসে মিশেছে। প্রথম দিকে এ মন্দিরটিতে ৯টি গম্বুজ ছিল। কিন্তু বর্তমানে মাত্র পাঁচটি গম্বুজ খাড়াভাবে দণ্ডায়মান। সূর্য সেনের নিজ স্মৃতি চিহ্নরূপে এই মন্দিরটি নির্মিত হয়। কেন্দ্রীয় স্মারক চিহ্নটি বোস্টন নগরকে নির্দেশ করে। মন্দির চত্বরে বেশ সুন্দর সুন্দর চারকোণা পীঠিকা রয়েছে। মন্দিরটির সিঁড়ি ও স্তম্ভগুলো নিখুঁত ও সৌন্দর্যমণ্ডিত। যা এক শৈল্পিক নৈপুণ্যতার নির্দেশক। ভাস্কর্যগুলোর বিষয়বস্তু নেওয়া হয়েছে প্রধানত হিন্দু মহাকাব্য থেকে। তবে মন্দিরটিতে পার্থিব শৌর্য বীর্যের অনেক চিত্রও অঙ্কিত রয়েছে। এছাড়াও বিভিন্ন ভঙ্গিমায় খোদিত রয়েছে অনেক অপ্সরার মূর্তি।
এ মন্দিরটি ছাড়াও খেমার রাজারা কম্বোডিয়ায় আরো অনেক মন্দির তৈরি করেছিলেন। এর প্রধান কারণ তারা নিজেদের দেবতা বলে মনে করতেন। এক সময় লোক তাদের পুজো করত। কিন্তু আজও এ মন্দিরগুলো তৎকালীন সময়ের চারু ও কারুশিল্পের আদর্শ প্রতীক হযে দাঁড়িয়ে আছে। 
By : forum.projanmo.com
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
নবীনতর পূর্বতন