সনাতন ধর্ম কি? কেন আমরা গর্বের সাথে বলতে পারি আমরা সনাতনী।

সনাতন-ধর্ম-কি?
বৈদিক শাস্ত্রের মধ্যে থেকে হাজারো প্রশ্নের এক এক প্রশ্ন! যে প্রশ্নের উত্তরের সন্ধান আমরা প্রতিনিয়ত করে থাকি। সকলের মূলত প্রশ্ন একমাত্র ধর্মগ্রন্থের উহার স্থায়ী সমাধান দেয়।


তাহলে দেখা যাক—
সনাতন_ধর্ম_মানে_কি?
ওঁ তৎ সৎ মানে ঈশ্বর একমাত্র সত্য।
বেদ মানে বৈদিক জ্ঞান।
সনাতন মানে চিরন্তন।
ধর্ম মানে ধারণ। এর মানেই ঈশ্বর একমাত্র সত্য তার দেওয়া বৈদিক জ্ঞান চিরন্তন ধারণ কর সকলে।

বৈদিক সনাতন ধর্ম নৈতিক শিক্ষা
সনাতন এক‌টি সংস্কৃত শব্দ যার অর্থ হলো "চিরন্তন" যা সর্বদা নতুন এবং অপরিবর্তনীয় শ্বাসতঃ যাহা ছিল আছে এবং চিরকাল থাকবে। সৃষ্টিকর্তার বিধান বারবার পরিবর্তন করার প্রয়োজন পড়ে না কারণ তা নির্ভূল। মানুষ ভুলের উর্ধ্বে নয় তাই মানব রচিত গ্রন্থ বা সংবিধান যুগে যুগে পরিবর্তন হয় বা সংশোধন করে যুগোপযোগী করা হয়।
ব্রহ্মাণ্ডের কখন কোথায় কি হয়েছে, হচ্ছে বা হবে সে বিষয়ে সম্পুর্ন জ্ঞান সৃষ্টিকর্তার আছে কারণ তিনি সর্বজ্ঞ।
(ঈশ্বর নির্দিষ্ট কোনও স্থানে বসে নেই)
ধর্ম— ধর্ম শব্দটিও সংস্কৃত ধৃ ধাতু থেকে উতপত্তি। যার অর্থ হলো ধারন করা।
যেমন— জলের ধর্ম তরলতা,আগুনের ধর্ম উত্তাপ দেওয়া ইত্যাদি সেইরুপ মানুষের ধর্মও মানবতা। 
(মনুর্ভব জনয়া দৈবং জনম্)
(ঋগ্বেদ, ১০/৫৩/৬)


প্রকৃত মানুষ হও এবং অন্যকেও মানুষ হিসেবে গড়ে তোল।
কিন্তু আমরা ধর্ম কে ব্যবহার করছি বিভিন্ন মত পথ সম্প্রদায় ভুক্ত জাতি বিশেষের ক্ষেত্রে।
মানুষ_কি?
একজন প্রকৃত মানুষ মুলত তিনটি গুনের সমষ্টি।
১) বিবেক

২) বুদ্ধি

৩) আত্মসংযম।

বিবেক— বিচার বিশ্লেষণ করা।

বুদ্ধি— ভালো মন্দ যাচাই করা।

আত্মসংযম— ধর্য্যশীল হওয়া।

পবিত্র_বেদে_কি_সনাতন_শব্দটি_আছেএই বিষয়ে দেখা যাক—
পূর্ণ ব্রহ্ম পরমাত্মা চিন্ময় সনাতন ।

জ্ঞান রঞ্জন সর্বং সনাতন ধারনং মনু সনাতন ।।

ইন্দ্রদেব প্রণামং সৃষ্টং শ্রেষ্ঠং ব্রহ্ম দেবং মনু সনাতনং ।।

(অথর্ববেদ, ৪/৬/৫৬-৫৭)

অনুবাদ অর্থঃ— পূর্ণব্রহ্ম পরমাত্মা চিন্ময় ও সনাতন তার দানকৃত সকল জ্ঞান ও সনাতন। জ্ঞানের ধারক মনুও সনাতন।ব্রহ্মার শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি সেই সনাতনী মনুকে প্রণাম(নমষ্কার) করলেন। (অথর্ববেদে ১০/৮/২২-২৩)


ওম্ ভোগ্য ভবদথো অন্নমদদ্ বহু ।

যে দেবমুতরাবন্তমুপাসতৈ সনাতনম্ ।।

(অথর্ববেদ, ১০/৮/২২)

পদার্থঃ— (যঃ) যে পুরুষ (দেবম্) ঐ প্রকাশময় (উতারাবন্তম্) শ্রেষ্ঠ গুনের চরমসীমারূপ (সনাতনম্) সদা বিদ্যমান প্রভুকে (উপাসাতৈ) উপসনা করি, এই (ভোগ্যঃ) উত্তমভোগকারী (ভবত) হয়, (অয়ো) এবং (বহু অন্নম অদত্) বড় লম্বা কাল পর্যন্ত অন্ন খানেয়ালা হয়। অর্থাৎ জীবকে প্রচুর অন্ন প্রদান পূর্বক সুদীর্ঘ জীবন প্রাপ্ত করায়।
অনুবাদ অর্থঃ— উতারাবান সনাতন দেবকে স্মরনকারী পুরুষ উত্তম ভোক্তা ও সুদীর্ঘকাল পর্যন্ত অন্নঅাদিকে প্রাপ্ত করিয়ে পুষ্ট করে থাকে।
প্রমানঃ 
ওম্ সনাতনমেনমাহুরুতাদ্য স্যাপ্তুনর্ণবঃ ।।
অহোরাত্রো প্রজায়েতে অন্যো অন্যস্য রূপয়ো ।।(অথর্ববেদ, ১০/৮/২৩)
পদার্থঃ— (এনম) এই প্রভুকে (সনাতনং অাহুঃ) সনাতন বলা হয়, পরন্ত (উত অদ্য) ও তো আজই (পুনর্ণবঃ) ফিরে নতুনের নতুন হয়। যে ভাবে (অহোরাত্রো) দিন ও রাত (অন্যঃ অন্যস্য রূপয়োঃ) এক রূপ হতে অন্য রূপে রূপান্তরিত (প্রজায়েতে) উৎপন্ন হয়। দিন পর রাত এবং রাতের পর দিন হয় এ জন্য রাত দিন নতুন নতুন লাগে। এই প্রকার সনাতন হয়ে ও প্রভু নবীন হতে নবীন। প্রভু কখন ও জীর্ন হয় না।
পবিত্র বেদ একবার নয় চারবার সনাতন শব্দ পাওয়া যায়। আর স্পষ্ট লেখা রয়েছে মনু সনাতনী তার উত্তরপুরুষ হিসেবে সবাই সনাতনী। এর মধ্যেও সনাতন নাম আছে।
ইয়ং নারী পতি লোকং বৃণানা নিপদ্যত উপত্ব্য মর্ন্ত্য প্রেতম্।

ধর্মং পুরাণমনু পালয়ন্তী তস্ম্যৈ প্রজাং দ্রবিণং চেহ ধেহি।। (অথর্ববেদ ১৮/৩/১)


পদার্থঃ— মর্ত্য-হে মনুষ্য, ইয়ং নারী-এই স্ত্রী, পতিলোকম-পতিলোককে অর্থাত্ বৈবাহিক অবস্থাকে, বৃণনা-কামনা করিয়া, প্রেতম-মৃত পতির, অনু-পরে, উপ ত্বা-তোমার নিকট, নিপদ্যতে-আসিতেছে, পুরাণম-সনাতন, ধর্ম্মম-ধর্মকে, পালয়ন্তী-পালন করিয়া, তস্য-তাহার জন্য, ইহ-এই লোকে, প্রজাম্-সন্তানকে, দ্রবিণং-এবং ধনকে, ধেহি-ধারন করাও।
বঙ্গানুবাদঃ— হে মনুষ্য! এই স্ত্রী পুনর্বিবাহের আকাঙ্খা করিয়া মৃত পতির পরে তোমার নিকট আসিয়াছে। সে সনাতন ধর্মকে পালন করিয়া যাতে সন্তানাদি এবং সুখভোগ করতে পারে।


মনুস্মৃতিতে_সনাতন_শব্দ
সত্যং ব্রুয়াৎ প্রিয়ং ব্রুয়ান্নব্রুয়াৎ সত্যমপ্রিয়ম্।

প্রিয়ং চ নানৃতং ব্রুয়াদেষ ধর্ম্মঃ সনাতনঃ।।

(মনুস্মৃতি, ৪/১৩৮)

অপরের হিতকর প্রিয় সত্য কথা বলিবে, অপ্রিয় সত্য কথা কখনো বলিবেনা যাহা লোকের মর্মভেদ করে, অপরকে প্রসন্ন করার সহিতে মিথ্যা বলিবে না, ইহাই বেদবিহিত সনাতন ধর্ম।
এছাড়া (মনুস্মৃতি, ৯/৫৪) এর মধ্যেও বেদবিহিত সনাতন ধর্মের কথা আছে।
গীতাতে ও সনাতন শব্দ
শ্রীগীতায়:- শাস্ত্রের বিধিবিধান মানতে বলা হয়েছে ,,
যঃ শাস্ত্রবিধিম্‌ উত্সৃজ্য বর্ততে কামকারত ॥

ন সঃ সিদ্ধিম্‌ অবাপেনাতি ন সুখেন ন পরাম্‌ গতিম্‌ ॥২৩॥

(গীতা, ১৬/২৩)

অর্থ— কিন্তু শাস্ত্রবিধি পরিত্যাগ করে যে কামাচারে বর্তমান থাকে সে সিদ্ধি বা সুখ বা পরা গতি লাভ করতে পারে না।

তস্মাত্ শাস্ত্রম্‌ প্রমানম্‌ তে কার্য অকার্য ব্যবস্থিতৌ ॥

জ্ঞাতা শাস্ত্র বিধান উত্তম্‌ কর্ম কর্তুম্‌ ইহ অর্হসি ॥২৪॥

(গীতা, ১৬/২৪)

অর্থ— অতএব কর্তব্য ও অকর্তব্য নির্ধারণে শাস্ত্রই একমাত্র প্রমাণ। অতএব শাস্ত্রিয় বিধি নিষেধের স্বরুপ জেনে কর্ম করা উচিত যাতে পারমার্থিক উন্নতি লাভ করা যায়।
কঠোপনিষ এর সনাতন শব্দ
নাচিকেতমুপাখ্যানং মৃত্যুপ্রোক্তঁ সনাতনম্ । 

উক্ত্বা শ্রুত্বা চ মেধাবী ব্রহ্মলোকে মহীযতে ।।

(কঠোপনিষদ, ২/১/১৬)

অনুবাদ অর্থঃ— মৃত্যু দ্বারা প্রোক্ত এ নচিকেতার সনাতন উপাখ্যানটি ব্যাখ্যা ও শ্রবণ করে মেধাবী লোক ব্রহ্মলোকে মহত্ত্ব হন।
হন্ত ত ইদং প্রবক্ষ্যামি গুহ্যং ব্রহ্ম সনাতনম্ । 

যথা চ মরণং প্রাপ্য আত্মা ভবতি গৌতম ।।

(কঠোপনিষদ, ২/২/৬)

অনুবাদ অর্থঃ— হে গৌতম, এখন আমি তোমাকে এই গুহ্য সনাতন ব্রহ্মের ব্যাখ্যা করব, মৃত্যুর পরে আত্মার কি হয়, তা শোন।
সনাতন ও আত্মাশরীর
সনাতন ধর্ম মানে যে ধর্মের সৃষ্টি হয়েছে আদি পূর্বে সেই ধর্ম কখনোও নষ্ট হয় না। যাহা চিরসত্যের মাঝে মাঝে অবলম্বনের মাধ্যমে প্রকাশিত হয়। যেমন— সুক্ষ আত্মা, জীবের মধ্যে প্রবিষ্ট হয়ে জীব আত্মায় পরিণত হয়েছে ঠিক তেমনি জীব মধ্যে আত্মাশরীর।


(১) সুক্ষ শরীর, মন, বুদ্ধি, চিত্ত, অহংকার।
(২) স্থূল শরীর, ইন্দ্রিয়ের সমূহ, ও অঙ্গ প্রতঙ্গের সমূহ দ্বারাই সজ্জিত হয়ে শরীর গঠন করেছে।
যেমন— আগুন যখন জড়ত্ব প্রাপ্তি হয় তখন কাঠ আশ্রয়ে থাকে ঠিক তেমনি আত্মার সমস্ত গুন থাকার সত্বেও, মোহ, লোভ প্রমাদ, হিংসা, ক্রোধ, ভোগ, অজ্ঞানাদির দ্বারাই জড়ত্ব প্রাপ্তি হয়ে জীব শরীর আশ্রয়ে থাকে। আর এই শরীরে হর্ষ, রোমঙ্চ, মোমতা, প্রমাদ, অলস্য, সুখ, দু়ঃখ, নিদ্রা, স্বপ্ন, ক্ষুদা, তৃষ্ণা, ভয়, আদির শীকার হয় ইহায় জীবের শরীর ধর্ম যা স্বাভাবিক।
অগ্নি যখন আশ্রয় ত্যাগ করে তখন
(১) অন্ধকার নাশ হয়।
(২) তাপ সৃষ্টি হয়।
(৩) কাঠের নাশ করে।
তেমনি জীব যখন বুদ্ধি, বিবেক, বিচার, দয়া কুরুনা, উদারতার দ্বারাই জড়ত্ব কাটিয়ে তোলে তৎক্ষনাত জ্ঞেন, বৌরাগ্য, ও অভয় প্রাপ্ত হয়। এবং আনন্দ প্রাপ্ত হয় এটাই হলো আত্মার ধর্ম সনাতন ধর্ম। সকল ধর্ম সম্প্রদায়ের এটাকে অনুভব করায় হলো ধর্ম আচরণ। আর সনাতন আত্মাই হলো সব ধর্ম সম্প্রদায়ের মূলধন।
সনাতন হলো ধর্ম একে অনুভব করার পক্রিয়া যত প্রকার ধর্ম সম্প্রদায় তত প্রকার ইহাও স্বাভাবিক কিন্তু জড়ত্ব প্রাপ্তি সম্প্রদায় হলো অধর্মের পিতা ও মাতা ইহাতে কোন সন্দেহ নাই।
ঈশ্বর কতৃক ধর্মের সৃজন তথাপি ঈশ্বরকে সনাতন বলা হয় এজন্য এই ধর্মকে সনাতন ধর্ম বলা হয়েছে।
সনাতন ধর্ম একমাত্র শ্রেষ্ঠ ধর্ম।

সত্যের সন্ধানে সনাতন ধর্মের পবিত্র বেদ।

সত্য স্বরূপে সনাতন ধর্মের জয় হোক।

জয় শ্রীরাম

হর হর মহাদেব
লেখকঃ— শ্রী বাবলু মালাকার

সনাতন বিদ্যার্থী সংসদ, চট্টগ্রাম
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
নবীনতর পূর্বতন