রামনবমী ও আমাদের শিক্ষা।

রামনবমী-ও-আমাদের-শিক্ষা।

পরিত্রাণায় সাধুনাং বিনাশায় চ দুষ্কৃতাং, ধর্ম সংস্থাপনার্থায় সম্ভবামি যুগে যুগে – এই উদ্দেশ্যেই ভগবান শ্রী রামচন্দ্র আবির্ভূত হলেন। দিনটি ছিল চৈত্র মাসের শুক্ল পক্ষের নবমী তিথি। শ্রী রাম জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে কর্তব্য পালনের পরাকাষ্ঠা। তাই তিনি মর্যাদা পুরুষোত্তম। তিনি পিতৃসত্য পালনে চোদ্দ বছরের বনবাসী, আবার ধর্মযুদ্ধে তিনিই বালীকে নিজে ছলনায় বধ করেন আর পূজারত নিরস্ত্র মেঘনাদকে বধ করতে ভাই লক্ষ্মণকে অনুমতি দেন।

একদিকে তিনি মহাবলী রাবণকে বধ করে প্রিয়তমা সীতাকে উদ্ধার করে আনেন, আবার তিনিই অযোধ্যার রাজা হয়ে প্রজাদের মতকে সম্মান জানিয়ে সেই সীতাকেই অগ্নিপরীক্ষায় প্রবৃত্ত করেন। প্রতি ক্ষেত্রেই ধর্ম পালনে তিনি আপোষহীন। আবার অধর্মের বিনাশে তিনি নির্মম। ভগবান শ্রী রামচন্দ্র আমাদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে গেছেন যে ধার্মিক হতে গেলে শুধু ধর্ম পালন নয়, ধর্ম রক্ষার জন্য অধর্মের সাথে নিরন্তর সংগ্রাম করাটাও আবশ্যক। তাই আজও শ্রী রামচন্দ্রই হিন্দুর আদর্শ, জীবনের ধ্রুবতারা। তাঁর আবির্ভাব তিথি তাই আমাদের কাছে অত্যন্ত শ্রদ্ধার রাম নবমী।


সুদীর্ঘ পরাধীনতা সাংস্কৃতিক মূল্যবোধগুলোকে যেমন আমাদের মনে আবছা করে দিয়েছে, মেকলের শিক্ষানীতি সেই মূল্যবোধগুলো সম্পর্কে আমাদের মনে অবজ্ঞার ভাব তৈরি করেছে৷ তারপর বামপন্থী এবং সেকুলারবাদীদের দ্বিচারিতা আমাদের চিন্তা ভাবনাকে সম্পূর্ণ বিভ্রান্ত করে দিয়েছে৷ এরা ভারতের ইতিহাসকে বিকৃত করে আজও সেই ভুল ইতিহাস আমাদের পড়তে বাধ্য করে চলেছে৷ এরা রামের অস্তিত্ব নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করলেও রাবণকে মহিমান্বিত করে থাকে৷ রাম-রাবণের যুদ্ধকে অনার্যদের উপরে আর্যদের আগ্রাসন বলে হিন্দু সমাজে বিভাজন আনতে চায়৷

রাবণের অস্তিত্বকে স্বীকার করলে কি রামের অস্তিত্বকেও স্বীকার করে নেওয়া হয় না? অাশ্চর্যের বিষয়, আজও এই দ্বিচারীদের বিভিন্নভাবে সমর্থন করে চলেছে কিছু নির্বোধ স্বার্থপর হিন্দু!

হিন্দু ধর্মগুরুদের এবং বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের কর্তব্য, শ্রীরামচন্দ্রের জীবনের মূল্যবোধগুলোকে তাঁদের অনুগামীদের সামনে সঠিক ভাবে তুলে ধরা৷ রামচরিত্রের যুগোপযোগী ব্যাখ্যা করে সমাজ জাগরণের পবিত্র কাজ এখন সময়ের দাবী৷ আজ হিন্দুর দেশে হিন্দু অত্যাচারিত, নিপীড়িত৷ আসুরিক সংস্কৃতির আগ্রাসনে নিজের দেশেই হিন্দুর অস্তিত্ব আজ বিপন্ন৷ তাই আসুন রামনবমীর পুণ্য দিবসে আমরা শ্রী রামচন্দ্রের সেই সংকল্পকে বাস্তবায়িত করার শপথ গ্রহণ করি – ‘নিশ্চরহীন করেঙ্গে ধরতী’ অর্থাৎ এই পৃথিবী থেকে অসুর সংস্কৃতিকে চিরতরে নিশ্চিহ্ন করার পরেই বিশ্রাম নেব৷ 

By: Hindusamhoti
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
নবীনতর পূর্বতন