সনাতন ধর্মে ভগবান।জানুন ভগবান কাকে বলে?


সনাতন-ধর্মে-ভগবান।জানুন-ভগবান-কাকে-বলে?


সনাতন ধর্ম অনুসারে ঐশর্য্য, বীর্য্য, যশ, শ্রী, জ্ঞান ও বৈরাগ্যকে ভগ বলে। এই ছয়টি গুণ অর্থাৎ ভগ যাঁর মধ্যে পূর্ণরূপে বিদ্যমান, তিনিই ভগবান। ঈশ্বরকে যখন এই ছয়টি গুণের অধীশ্বর রূপে কল্পনা ও আরাধনা করা হয় তখন তিনি ভগবান নামে পরিচিত হন।


“ভগ” ও “বান”

এই দুইটি শব্দের সন্ধির ফলে মূলতঃ— ভগবান শব্দের উদ্ভব হয়েছে। “ভগ” শব্দটি গুনবাচক উপসর্গ এবং “বান” শব্দের অর্থ হলো অধিকারী কিংবা যার আছে অর্থে বুঝায়। “বান” শব্দের পূর্বে গুনবাচক উপসর্গ “ভগ” শব্দটি বসানোর পর একত্রে “ভগবান” শব্দটি এসেছে। বান শব্দের আগে ভগ শব্দ বসানো হয়েছে যেমনটা রূপবান, যার ধনবান শব্দটির সৃষ্টি হয়েছে ঠিক একভাবে। ‘ভগ’ অর্থ ঐশ্বর্য্য এবং ‘বান’ অর্থ অধিকারী, যার আছে। ঠিক যেভাবে যার সুন্দর রূপ আছে আমরা তাকে বলি রূপবান, যার ধন আছে ধনবান, ঠিক তদ্রুপ যিনি ভগ অর্থাত্‍ ঐশ্বর্যের অধিকারী তাকে বলে ভগবান।


পরাশর মুনি ভগবান শব্দের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলেছেন

ঐশ্বর্য্যস্য সমগ্রস্য বীর্যস্য যশসঃ শ্রিয়ঃ ।
জ্ঞানবৈরাগ্যয়োশ্চৈব ষন্নত্‍ ভগ ইতিঙ্গনা ॥
যার মধ্যে সমস্ত ঐশ্বর্য্য, সমস্ত বীর্য্য, সমস্ত যশ, সমস্ত শ্রী, সমস্ত জ্ঞান এবং সমস্ত বৈরাগ্য এই ছয়টি গুন পূর্ণমাত্রায় বর্তমান, তিনি হচ্ছেন ভগবান। এই জগতে কেউ বড় ধনী হতে পারে, কিন্তু কেউ দাবী করতে পারে না আমি সমস্ত ধনের মালিক। এই জগতে কেউ জ্ঞানী হতে পারে, কিন্তু তিনি দাবী করতে পারে না তিনি সমস্ত জ্ঞানের অধিকারী। কিন্তু ভগবান সমস্ত ধন, সমস্ত জ্ঞান, সমস্ত সৌন্দর্য্য, সমস্ত যশ, সমস্ত শক্তির অধিকারী, তাই তাকে বলা হয় ভগবান। সুতরাং কোন ব্যক্তির মধ্যে এই ছয়টি গুনের পূর্ণ বিকাশ (আংশিক নয়) দেখা গেলে তাকে ভগবান সম্মোধন করতে বাঁধা নেই।
মূলতঃ— এই কারণেই যে সনাতন ধর্মে বহু মুনি, মহামুনি, ঋষি, মহাঋষিদের নামের আগে ভগবান শব্দটির ব্যবহার হতে দেখা যায়।
সনাতন ধর্মানুসারে পরম তৃপ্তি ও মুক্তির পথ ঈশ্বরের সান্নিধ্য লাভ করাই হলো পরম তৃপ্তি ও মুক্তির একমাত্র পথ। জীবদেহের ভেতরে যে জীবন আছে তা পরমাত্মার পরমব্রহ্মের অংশ তাই নিজেকে জানার জন্য ধ্যান ও গায়ত্রী মন্ত্র জব করুন।
সনাতন হিন্দুধর্মের তিন ঈশ্বরের ধ্যান আদি মহামন্ত্র
একমাত্র হলো গায়ত্রী। এই গায়ত্রী বেদের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামন্ত্র পরমাত্মার ধ্যানের জন্য গায়ত্রী সিদ্ধ বৈদিক মন্ত্র। এই গায়ত্রী মন্ত্রের নামই গুরুমন্ত্র 'গুরু' অর্থ শ্রেষ্ঠ।

গায়ত্রী মন্ত্র
ওঁ ভূর্ভুবঃ স্বঃ তৎ সবিতুর্বরেণ্যং ভর্গো দেবস্য ধীমহি।
                                                  ধিয়ো য়ো নঃ প্রচোদয়াৎ।।
(ঋগবেদ ৩।৬২।১০), (যজুর্বেদ ৩।৩৫, ২২।৯), (৩০।২, ৩৬।৩), সামবেদ উত্তরার্চিক, (প্রপাঠক ৩, অর্দ্ধপ্রপাঠক ৩, মন্ত্র ১০।গ)।
অনুবাদ- পরমাত্মা প্রাণস্বরূপ, দুঃখনাশক ও সুখস্বরূপ। জগৎ উৎপাদক দিব্য গুণযুক্ত পরমাত্মার সেই বরণীয় পাপনাশক শুদ্ধ স্বরূপকে ধ্যান করি। যিনি আমাদের নির্মল বুদ্ধির প্রেরণা দান করেন।
ওঁ শান্তি ওঁ শান্তি ওঁ শান্তি
জয় শ্রীরাম
হর হর মহাদেব
SVS
চট্টগ্রাম বিভাগীয় কর্মী

শ্রী বাবলু মালাকার

(সনাতন বিদ্যার্থী সংসদ, চট্টগ্রাম)
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
নবীনতর পূর্বতন