রুদ্রাক্ষ কি? রুদ্রাক্ষ ব্যবহারের সুফল। জানুন আধুনিক গবেষণা কি বলছে।

রুদ্রাক্ষ কি? রুদ্রাক্ষ ব্যবহারের সুফল। জানুন আধুনিক গবেষণা কি বলছে।

রুদ্রাক্ষ একপ্রকার বৃহৎ ও চওড়া পাতাওয়ালা চিরহরিৎ বৃক্ষ যার বীজ হিন্দুধর্মাবলম্বীগণ বিভিন্ন ধর্মীয় কাজে ব্যবহার করেন। রুদ্রাক্ষ শব্দটি সংস্কৃত ভাষার, যার অর্থ রুদ্রের চোখ বা শিবের চোখ।

ব্যুৎপত্তি

রুদ্র অর্থ শিব, অক্ষ অর্থ চোখ বা চক্ষুজল। পৌরাণিক কাহিনীর একটিতে আছে, দুর্বিনীত অসুর ত্রিপুরকে বধ করতে গিয়ে শিব দীর্ঘকাল অপলক নেত্রে যুদ্ধ করার কারণে তার অবসাদগ্রস্ত চোখ থেকে মাটিতে গড়িয়ে পড়ে এক ফোঁটা অশ্রু। সেই অশ্রুকণা থেকেই জন্ম হয় রুদ্রাক্ষের।

ব্যবহার ও উপকারিতা

রুদ্রাক্ষের মালা হাজার বছর ধরে হিন্দু সম্প্রদায়, বৌদ্ধ ভিক্ষু এবং বাউলদেরও এটা ব্যবহার করতে দেখা গেছে, কারণ রুদ্রাক্ষ তখন ছিল সহজলভ্য। এখন জনসংখ্যা বেড়েছে বহুগুণ এবং সেই তুলনায় গাছের সংখ্যা গেছে কমে যে কারণে দুর্লভ হয়ে পড়েছে বস্তুটি। এই রুদ্রাক্ষের বেশির ভাগ, প্রায় ৬৫ ভাগ পাওয়া যায় ইন্দোনেশিয়ার জাভা, সুমাত্রা এবং বোর্নিও প্রভৃতি দ্বীপে, ২৫ ভাগ পাওয়া যায় নেপালে, সবিশেষে ভোজপুর জেলায়, এবং বাকি সব ভারত-বাংলাদেশসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে।
বিগত ষাটের দশকে লস এঞ্জেলস-এর ‘সেলফ রিয়ালাইজেশান’ পত্রিকায় প্রথম বৈজ্ঞানিক আলোচনা দেখা যায় রুদ্রাক্ষের ইলেক্ট্রো-ম্যাগনেটিক স্বভাব সম্পর্কে। এর পর বেনারস ইন্সটিটিউট অব টেকনোলজির ডক্টর সুভাস রায় একটি গবেষণালব্ধ পুস্তক প্রকাশ করেন, যা রুদ্রাক্ষের অনেক কার্যকারিতার দিক উম্মোচন করে। মানব দেহের রক্ত সংবহনতন্ত্রে এর কাজ অসাধারণ সাফল্য অর্জন করেছে। এই তন্ত্র ঠিকমত কাজ না করলে দেহমন অনেক ধরনের রোগের শিকার হয়ে পড়ে। রুদ্রাক্ষের চৌম্বকীয় আবেশের জন্যে দেহের কিছু ধমনী ও শিরা স্ফীত হয়ে রক্ত সঞ্চালনে সহায়তা করে। জীবিকা ও জীবোন্নতির কারণে আমরা এ যুগে অতিরিক্ত মানসিক চাপ নিয়ে চলি। চাপের কারণে হৃদযন্ত্রের স্পন্দনের মাত্রা বেড়ে যায় যাতে দেহে অতিরিক্ত জীববিদ্যুৎ তৈরি হতে থাকে। রুদ্রাক্ষ এই অতিরিক্ত বিদ্যুৎকে ধারণ করে স্থিতিশীল করতে পারে। অতএব রক্ত সংবহনে এবং হৃদযন্ত্রের স্পন্দন নিয়ন্ত্রণে এর ভূমিকা অনেক।
অভিজ্ঞতা ও বিজ্ঞানের আলোকে রুদ্রাক্ষের উপকারিতা উপলব্ধি করার পর থেকে উত্তরোত্তর এর চাহিদা বেড়েছে কিন্তু সেই তুলনায় সরবরাহ নেই। আমাদের প্রতিবেশী রাজ্য নেপালে সবচেয়ে বেশি রুদ্রাক্ষের চাষ হয় কিন্তু তা আশু প্রয়োজন মেটাবার জন্যে যথেষ্ট নয়। রুদ্রাক্ষের সকল বীজকোষে বীজ থাকে না, প্রায় ২০% থাকে শূন্য। শক্ত বীজ থেকে অঙ্কুরোদ্গমের জন্যে সময় লাগে ৬ মাস। নেপালের মত উপযুক্ত আবহাওয়া না পেলে এই গাছ তেমন ফলবতী হতে পারে না। উভলিংগী ফুল হওয়া সত্ত্বেও এসব গাছে ফুল ধরতে ৫ থেকে ২০ বছর পর্যন্ত লেগে যায়। একটি গাছে ফল ধরে দুয়েক হাজার যার প্রায় অর্ধেক ঝরে পড়ে অপরিপক্ক অবস্থায়। গাছের ওপরের অবশিষ্ট ফল বিশেষ কৌশলে সংগ্রহ করতে হয় তান্ত্রিক-দ্রব্য সংগ্রহকারীদের মাধ্যমে। চোখ ওঠা,হাপানিতে, ক্ষয় রোগে, মৃগী রোগে এ গাছের উপকারিতা আছে।

বিভিন্ন শাস্ত্রে এক থেকে চৌদ্দমুখী পর্যন্ত রুদ্রাক্ষ ব্যবহারের যে নিয়ম, আচার ও অনুষ্ঠানের উল্লেখ আছে তা এখন বলা হচ্ছে। 
-
একমুখী রুদ্রাক্ষ
===========
রুদ্রাক্ষের মধ্যে সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ এই শ্রেণীকে ‘শিব’ নামে অভিহিত করা হয়। রুদ্রাক্ষের যেসব গুণাগুণের কথা ইতিপূর্বে বলা হয়েছে সে সমস্তই এ শ্রেণির রুদ্রাক্ষের মধ্যে দেখতে পাওয়া যায়। খুবই দুর্লভ শ্রেণীর রুদ্রাক্ষ এবং অত্যন্ত মূল্যবানও বটে। বলা হয়, এই রুদ্রাক্ষ ধারণে মানুষ অপরাজেয় হয়। বিশেষ আধ্যাত্মিক উন্নতিও ঘটে। রুদ্রাক্ষের উজ্জীবন করতে হয়, 'ওঁ ঐং' মন্ত্র ১০৮ বার উচ্চারণ করে ডান বাহুতে বা কণ্ঠে এ রুদ্রাক্ষ ধারণ করলে লোকপ্রভাবিনী শক্তির স্ফুরণ ঘটে। রাশিচক্রে রবিগ্রহ, পাপপীড়িত, পাপগ্রহদৃষ্ট, নীচস্থ পাপযুক্ত বা যে কোনোভাবে পীড়িত হলে এ গ্রহের শান্তির নিমিত্ত উপরোক্ত রুদ্রাক্ষ যথাবিধ সংস্কারপূর্বক জপ করে ধারণ করলে রবিগ্রহের সমস্ত কুফল নষ্ট হয়।
-
দ্বিমুখী রুদ্রাক্ষ
=========
এ জাতীয় রুদ্রাক্ষকে ‘হরগৌরী’ নামে অভিহিত করা হয়। এ রুদ্রাক্ষ ধারণে মনের একাগ্রতা জীবনে শান্তি এনে দেয়। অজ্ঞাতসারে গোহত্যাজনিত পাপের স্খলন হয়। কুলকুণ্ডলিনী শক্তি সম্পর্কে চেতনার সঞ্চার করে। মন্ত্র উচ্চারণসহযোগে এই রুদ্রাক্ষের উজ্জীবন হয়। মন্ত্র পাঠ করে ডান হাতে বা কণ্ঠে এ রুদ্রাক্ষ ধারণ করলে ত্রিজন্ম সঞ্চিত পাপরাশি দূরীভূত হয়। রাশিচক্রে কেতুগ্রহ নীচস্থ, পাপপীড়িত বা যে কোনোভাবে অশুভ হলে এ গ্রহের শান্তির নিমিত্ত উক্ত রুদ্রাক্ষ যথাবিধি সংস্কারপূর্বক 'ওঁ শ্রীং' মন্ত্র ১০৮ বার জপ করে ধারণ করলে কেতুগ্রহের সমস্ত কুফল নষ্ট হয়। 
-
ত্রিমুখী রুদ্রাক্ষ
===========
এ জাতীয় রুদ্রাক্ষের নাম ‘অগ্নি’। অতীত পাপ বিনষ্ট করে, মানুষের সৃজনীশক্তির বিকাশ সাধন করে, চিরকর্মচঞ্চল জীবনীশক্তিকে উন্নীত করে, ম্যালেরিয়া রোগ নিবারণ করে। মন্ত্র পাঠ করে দু’বাহুতে ধারণ করলে অসাধারণ শক্তির সঞ্চার হয়। রাশিচক্রে মঙ্গল বা যে কোনোভাবে পীড়িত হলে এ গ্রহের শান্তির নিমিত্ত উক্ত রুদ্রাক্ষ যথাবিধ সংস্কারপূর্বক 'ওঁ ধ্রুং ধ্রুং' মন্ত্র ১০৮ বার জপ করে ধারণ করলে মঙ্গল গ্রহের সমস্ত কুফল নষ্ট হয়।
-
চতুর্মুখী রুদ্রাক্ষ
===========
জ্যোতিষক নাম ‘ব্রহ্মা’। মনের ক্রিয়াকলাপের উপরে এ শ্রেণির রুদ্রাক্ষের প্রভাব চমৎকার। সে কারণে উন্মত্ততা, অনিদ্রা, বিষাদময়তা ইত্যাদি মানসিক রোগের ক্ষেত্রে স্বচ্ছন্দে ব্যবহার করা হয়। এ রুদ্রাক্ষ ধারণে স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি হয়। তুচ্ছ বিষয়ে মানসিক অস্থিরতার উপশম হয়, মানসিক অবসাদ দূর হয়, উদ্বেগ, ভয়, খিটখিটে স্বভাব ও আত্মহনন-চিন্তা ইত্যাদির প্রকোপ হ্রাস করে, বক্তৃতা-ক্ষমতা, কর্মতত্পরতা ও বুদ্ধি বৃদ্ধির উন্মেষকারক এ রুদ্রাক্ষ মন্ত্র পাঠ করে কণ্ঠে ধারণ করতে হয়। রাশিচক্রে চন্দ্রগ্রহ নীচস্থ, পাপযুক্ত ও পাপপীড়িত হয়ে দ্বিতীয়ে, ষষ্ঠে, অষ্টমে দ্বাদশে অবস্থান করলে এ গ্রহের শান্তির নিমিত্ত উক্ত রুদ্রাক্ষ যথাবিধ সংস্কার করে 'ওঁ হ্রীং হ্রং' মন্ত্র ১০৮ বার জপের পর ডান হাতে ধারণ করলে চন্দ্রগ্রহের সমস্ত কুফল নষ্ট করে বিভিন্ন শান্তি ও সুখ আনয়ন করে।
-
পঞ্চমুখী রুদ্রাক্ষ
===========
সর্বাধিক পরিচিত এবং সর্বত্রই এ রুদ্রাক্ষ পাওয়া যায়। এ রুদ্রাক্ষ দুই শ্রেণির হয়ে থাকে। এর নাম ‘কালাগি রুদ্র’। এ রুদ্রাক্ষ ধারণে নিষিদ্ধ খাদ্যগ্রহণ ও নিষিদ্ধ কর্ম সম্পাদনের পাপ অপনোদন হয়, মানসিক প্রশান্তি আসে। শিবের পঞ্চাক্ষরী মন্ত্র সহযোগে সন্ধ্যাকালে দেহের যে কোনো অংশে ধারণ করলে অখাদ্য ভোজনজনিত পাপ নষ্ট হয়। রাশিচক্রে শনিগ্রহ, রবিযুক্ত হলে লগ্নে, দ্বিতীয়ে, ষষ্ঠে, সপ্তমে, অষ্টমে, দ্বাদশে অবস্থান করলে বা যে কোনোভাবে শনিগ্রহ পাপপীড়িত, নীচস্থ ও অশুভ গ্রহযুক্ত হলে এ গ্রহের শান্তির নিমিত্ত উক্ত রুদ্রাক্ষ যথাবিধি সংস্কারপূর্বক 'ওঁ হ্রীং' মন্ত্র ১০৮ বার জপের পর ধারণ করলে শনিগ্রহের সমস্ত অশুভ ফল নষ্ট হয়।
-
ষড়মুখী রুদ্রাক্ষ
===========
এ জাতীয় রুদ্রাক্ষের নাম ‘কার্তিকেয়’। ছাত্রদের পক্ষে ও যারা দুরারোগ্য রোগে ভুগছেন তাদের পক্ষে এ রুদ্রাক্ষ বিশেষ উপকারী। জ্ঞানবৃদ্ধির ক্ষেত্রে এ রুদ্রাক্ষর চমত্কার কার্যকারিতা লক্ষ্য করা যায়। মন্ত্রযোগে রুদ্রাক্ষ উজ্জীবন করা হয়। ভূত-প্রেতাদি দ্বারা অনিষ্ট সাধনের ক্ষেত্রে প্রতিকাররূপে ধারণীয়। মানসিক অবসাদ, স্বভাবের উগ্রতা ও নানা রোগের উপকারকারী এ রুদ্রাক্ষ। রাশিচক্রে শুক্র কন্যায় নীচস্থ, অশুভ গ্রহযুক্ত দ্বিতীয়, পঞ্চম, ষষ্ঠ, অষ্টম, দ্বাদশে অবস্থান করলে বা অশুভ হলে এ গ্রহের শান্তির নিমিত্ত উক্ত রুদ্রাক্ষ যথাবিধি সংস্কারপূর্বক 'ওঁ ঐং হ্রীং' মন্ত্র ১০৮ বার জপের পর ধারণ করলে শুক্রগ্রহের সমস্ত অশুভ ভাব নষ্ট হয়। 
-
সপ্তমুখী রুদ্রাক্ষ
===========
এ শ্রেণির রুদ্রাক্ষের নাম অনন্ত মাতৃকা। এ রুদ্রাক্ষ ধারণে সামাজিক প্রতিষ্ঠা, অর্থ মান, যশ ও প্রতিপত্তিলাভের পথ সুগম হয়ে থাকে। রাশিচক্রে রাহুগ্রহ রবি ও চন্দ্র যুক্ত হয়ে লগ্নে দ্বিতীয়ে, চতুর্থে, পঞ্চমে, ষষ্ঠে, সপ্তমে, অষ্টমে, নবমে, দশমে এবং দ্বাদশে অবস্থান করলে বা কোনোভাবে অশুভ হলে এ গ্রহের শান্তির নিমিত্ত উক্ত রুদ্রাক্ষ উজ্জীবন করতে হয়। 'ওঁ হ্রীং' মন্ত্র ১০৮ বার জপের পর উক্ত রুদ্রাক্ষ কণ্ঠে ধারণ করলে রাহু গ্রহের সমস্ত কুফল বিনষ্ট হয়।
-
অষ্টমুখী রুদ্রাক্ষ
===========
এই রুদ্রাক্ষের দুটি নাম বিনায়ক ও বটুকভৈরব। শনিগ্রহ ও রাহুর অশুভ প্রভাব খর্ব করে। এ রুদ্রাক্ষ ধারণে হঠাত্ আঘাত পাওয়া থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। দুষ্কৃতকারীদের হাতে আক্রান্ত হওয়া থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। রাশিচক্রে শনি ও রাহু অশুভ থাকলে উক্ত রুদ্রাক্ষ যথাবিধি সংস্কারপূর্বক পুরুষের ডান বাহুতে এবং স্ত্রীলোকের বাম বাহুতে ধারণীয়। 'ওঁ রুং রং' মন্ত্র ১০৮ বার জপের পর উক্ত রুদ্রাক্ষ ধারণ করলে সমস্ত অশুভ প্রভাব দূরীভূত হয়। 
-
নবমুখী রুদ্রাক্ষ
==========
এ রুদ্রাক্ষের নাম মহাকাল ভৈরব। ধারণে জীবনে উন্নতির সূচনা যায়, সমস্যা ও প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও জয়লাভ করা হয়। দুর্ঘটনা ও হঠাত্ মৃত্যুর হাত থেকেও রক্ষা পাওয়া যায়। ধারণের পূর্বে মন্ত্র উচ্চারণ করে এ রুদ্রাক্ষের উজ্জীবন বা প্রাণসঞ্চার করে নিতে হয়। 
মন্ত্র পাঠের পর উচ্চারণ করতে হয়। বুদ্ধিবৃত্তিজনিত কাজকর্মের ক্ষেত্রে নানাভাবে প্রচুর সুফল দান করে এ রুদ্রাক্ষ। রাশিচক্রে বৃহস্পতি গ্রহ মকরে নীচস্থ, মকরস্থানে অবস্থান করলে, বা মারকস্থ হলে এবং ষষ্ঠ, অষ্টম, দ্বাদশ স্থানে অবস্থান করলে কিংবা কোনোভাবে অশুভ হলে এ গ্রহের শান্তির নিমিত্ত উপরোক্ত রুদ্রাক্ষ যথাবিধ সংস্কার পূর্বক 'ওঁ হ্রাং' মন্ত্র ১০৮ বার জপের পর পুরুষের দক্ষিণ বাহুতে এবং স্ত্রীলোকের বামবাহুতে ধারণ করলে সকল অশুভ বিনাশ হয়।
-
দশমুখী রুদ্রাক্ষ
===========
এ শ্রেণির রুদ্রাক্ষ দুর্লভ। এর নাম মহাবিষ্ণু। মর্যাদা, প্রতিষ্ঠা, সুনাম, খ্যাতি, সন্মান, পার্থিব সমৃদ্ধি, কর্মদক্ষতা এবং ব্যবসায়িক সাফল্য অর্জনে সহায়ক এ রুদ্রাক্ষ। প্রেতাদি কর্তৃক অনিষ্টকর প্রভাব থেকেও মুক্ত হওয়া যায়। রাশিচক্রে বুধ গ্রহ নীচস্থ শত্রুযুক্ত ও শত্রুক্ষেত্রগত, দ্বিতীয়, ষষ্ঠ, অষ্টম ও দ্বাদশ স্থানে অবস্থান করলে বা কোনোভাবে পীড়িত হলে উক্ত রুদ্রাক্ষ যথাবিধি মন্ত্রোচ্চারণপূর্বক সংস্কার করে 'ওঁ হ্রীং' মন্ত্র ১০৮ বার জপের পর ধারণ করতে হয়। মন্ত্র পাঠ ও জপ করে জপের পর উক্ত রুদ্রাক্ষ কণ্ঠে ধারণ করলে সমস্ত অশুভ দূরীভূত হয়।
-
একাদশমুখী রুদ্রাক্ষ
==============
এটি একটি বিশেষ জাতের রুদ্রাক্ষ। এর নাম মহামৃত্যুঞ্জয়। মেয়েদের নানা অসুখের ক্ষেত্রে একান্তভাবেই সুফল প্রদানকারী, আত্মবিশ্বাসের অভাব ঘটলে, আত্মহনন চিন্তা এসে মনকে ও মেজাজ খিটখিটে স্বভাবের হয়ে উঠলে এ রুদ্রাক্ষ ধারণে তার উপশম হয়। মন্ত্র উচ্চারণযোগে রুদ্রাক্ষ উজ্জীবিত করে ধারণ করা প্রয়োজন। রাশিচক্রে শুক্র ও মঙ্গল অশুভ থাকলে মন্ত্রে যথাবিধি সংস্কার করে 'ওঁ শ্রীং' মন্ত্র ১০৮ বার জপের পর ডান হাতে ধারণ করলে সমস্ত অশুভ প্রভাব নাশ হয়।
-
দ্বাদশমুখী রুদ্রাক্ষ
============
এর নাম অর্ক বা আদিত্য। এ রুদ্রাক্ষ রবি ও রাহুর অশুভ প্রভাবকে প্রশমিত করে। রবি যখন মকরে বা কুম্ভরাশিতে অবস্থিত হয়ে অশুভদশা প্রাপ্ত হয় তখন এ রুদ্রাক্ষ ধারণ করলে সকল কুফল নষ্ট হয়। ব্যবসায়িক মন্দা বা অসাফল্য নিবারণ করতে মন্ত্র সহযোগে এ রুদ্রাক্ষকে উজ্জীবন করে ধারণ করতে হয়। 'ওঁ হ্রাং হ্রীং' মন্ত্র ১০৮ বার জপের পর রুদ্রাক্ষটি কণ্ঠে ধারণ করলে সমস্ত অশুভ বিনষ্ট হয়।
-
ত্রয়োদশমুখী রুদ্রাক্ষ
==============
এর নাম কাম। এর ধারণে সর্বভাবেই কামনীয় বিষয়ের প্রাপ্তিযোগ ঘটে। এ রুদ্রাক্ষ ধারণে উচ্চাকাঙ্ক্ষার পরিপূরণ হয়। চিন্তামণি মন্ত্র সহযোগে এ রুদ্রাক্ষ উজ্জীবন করতে হবে। অতঃপর 'ওঁ ক্ষৌং নমঃ' মন্ত্র ১০৮ বার জপের পর ডান হাতে ধারণ করলে সমস্ত পাপ দূর হয় ও সকল মনোরথ সিদ্ধি হয়। এর ধারণে চন্দ্র ও শুক্রের অশুভ প্রভাব নাশ হয়ে থাকে।
-
চতুর্দশমুখী রুদ্রাক্ষ
=============
এই রুদ্রাক্ষ শ্রীকণ্ঠ নামে পরিচিত। এই রুদ্রাক্ষ ইন্দ্রিয় সংযমে সাহায্য করে। পঞ্চমুখ হনুমানমন্ত্র সহযোগে একে উজ্জীবিত করতে হয়। মন্ত্র পাঠ করে বীজমন্ত্র জপ করে ধারণ করলে শুক্রগ্রহের সমস্ত অশুভ বিনষ্ট হয়। 'ওঁ তমাং' মন্ত্র ১০৮ বার জপের পর ধারণ করলে বৃহস্পতি ও রবির সমস্ত অশুভ প্রভাব নষ্ট হয়ে থাকে।
-
জ্যোতিষমতে ও স্কন্দপুরাণানুযায়ী রুদ্রাক্ষ ধারণের বিধি ও ফলাফল বর্ণনা করা হলো। শুদ্ধ চিত্তে সঠিক মন্ত্রোচ্চারণাদি করে রুদ্রাক্ষ ধারণ করলে অবশ্যই ফল লাভ হবে। যেহেতু নকল রুদ্রাক্ষে প্রতারিত হবার আশঙ্কা আছে, তাই বিশেষজ্ঞের সহায্যে পরীক্ষা করিয়ে অনুষ্ঠানাদির জন্য যোগ্য পুরোহিতের সাহায্য নেওয়া বাঞ্ছনীয়। সংক্রান্তি, অষ্টমী তিথি, চতুর্দশী তিথি, গ্রহণ, পূর্ণিমা বা অমাবস্যা ইত্যাদি পুণ্য তিথিতেই রুদ্রাক্ষ ধারণ করা উচিত। তিথির সঙ্গে শুভ নক্ষত্র যোগ দেখে নিতে হবে। এ বিষয়ে অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের উপদেশ মেনে চলা উচিত। বাহুতে বা কণ্ঠে স্বর্ণসূত্রে, রৌপ্যসূত্রে বা কার্পাসসূত্রে গ্রথিত করে পঞ্চগব্য, পঞ্চামৃত দ্বারা মহাস্নান করিয়ে উল্লিখিত মন্ত্রসহযোগে রুদ্রাক্ষকে উজ্জীবিত করে ভক্তিসহকারে ধারণের কথা শাস্ত্রে বলা হয়েছে।



তথ্যসূত্র : Wikipedia & Avijit Pratap Roy
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
নবীনতর পূর্বতন